Thank you for trying Sticky AMP!!

ময়লার স্তূপ, যাত্রীদের ভোগান্তি

যত্রতত্র পড়ে আছে ময়লা-আরর্জনা। তার পাশ দিয়ে চলতে গিয়ে ভোগান্তি যাত্রীদের। ৪ এপ্রিল সকালে সিলেটের কুমারগাঁও বাসষ্ট্যান্ড এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সিলেট শহরতলির কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড। এ স্ট্যান্ড থেকে পার্শ্ববর্তী জেলা সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াত করে যাত্রীবাহী বাস। প্রতিদিন সহস্রাধিক যাত্রী কুমারগাঁও স্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করে। তেমনি সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে এ স্ট্যান্ড দিয়ে সিলেট শহরে আসে একইসংখ্যক যাত্রী। অথচ এই স্ট্যান্ডটি ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। বৃষ্টি হলে কাদাপানি টপকে বাসে চড়তে হয়। তখন ভোগান্তি আরও চরমে ওঠে।

৪ এপ্রিল দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জগামী একটি বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করছে। এ সময় কয়েকজন যাত্রী কাদাপানি ও ময়লা-আবর্জনা পেরিয়ে বাসে উঠলেন। পায়ে লেগে যাওয়া ময়লা-আবর্জনার অস্বস্তি তখনো তাঁদের চোখেমুখে।

সালাম মিয়া নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আমি প্রায়ই সিলেট থেকে বাসে করে সুনামগঞ্জে যাওয়া-আসা করি। বাসে এলে এ স্ট্যান্ডে নেমে শহরে যাওয়ার জন্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিতে হয়। অনেক দিন ধরে এ স্ট্যান্ডের সংস্কার নেই। ফলে বৃষ্টি হলেই কাদাপানি জমে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়। আর ময়লা-আবর্জনা তো আছেই।’

যাত্রী-বাসকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া স্ট্যান্ডটি সিলেট সদর উপজেলা এলাকায় পড়েছে। কিন্তু এটি পরিচালনা করে সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে এই স্ট্যান্ড নিয়ে একধরনের টানাপোড়েন আছে। উপজেলা প্রশাসন বা সিটি করপোরেশন কেউই এখানকার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্ব নেয় না। এ কারণেই এই স্ট্যান্ডের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।

বাসস্ট্যান্ডের দুজন চালক ও তিনজন সহকারী বলেন, এই স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০-২২টি বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করে। প্রতি বাসে যাত্রী থাকে ৫৫-৬০ জন। সে হিসাবে সিলেট থেকে স্ট্যান্ড হয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা সহস্রাধিক। সুনামগঞ্জ থেকেও একই হারে যাত্রী আসে সিলেটে। বাস ছাড়াও প্রাইভেট কার ও অন্য যানবাহনে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করে। স্ট্যান্ডে ময়লা-আবর্জনার বিষয়ে তারা বলে, ময়লা-আবর্জনার জন্য বাসে করে আসা-যাওয়া করা যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হয়। শুধু যাত্রীরাই নয়, পরিবহনশ্রমিকদেরও ময়লা-আবর্জনা ও কাদাপানির জন্য ভোগান্তি পোহাতে হয়।

বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দিরাই রেস্তোরাঁর সামনে কথা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ স্ট্যান্ড দিয়ে দৈনিক সহস্রাধিক যাত্রী আসা-যাওয়া করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মেরামত কিংবা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না। এতে যাত্রীদের যেমন ভোগান্তি হচ্ছে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। একইভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যানবাহনের কর্মীরাও।

এদিকে গত বুধবার থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান। অভিযানে সিলেট সিটি করপোরেশনের এলাকাধীন ২৭টি ওয়ার্ডেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। তবে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড এলাকাটি সিটি করপোরেশনের কোনো ওয়ার্ডের মধ্যে না পড়ায় এখানে ওই অভিযান পরিচালিত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে এলাকাবাসীর।

এলাকার চারজন বাসিন্দা বলেন, কুমারগাঁও এলাকাটি সিলেট সদর উপজেলায় পড়েছে। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডটি সিলেট সিটি করপোরেশনের। সাধারণত সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তাদের বাইরের এলাকাকে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে না। আবার বাসস্ট্যান্ডটি সদর উপজেলা প্রশাসনের অধীনে নেই। ফলে তারা এখানকার উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ ভবিষ্যতেও নেবে বলে মনে হয় না। দুই কর্তৃপক্ষের মধ্যে পড়ে এই এলাকা অনেকটা উন্নয়নবঞ্চিত। বাসস্ট্যান্ডটি দেখার কেউ না থাকায় যাত্রী ও পরিবহনসংশ্লিষ্ট সবাই ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের অবকাঠামো উন্নয়নের আপাতত সিটি করপোরেশনের কোনো প্রকল্প নেই। তবে ময়লা-আবর্জনা নিষ্কাশন করার সুযোগ রয়েছে। যেহেতু সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলমান, সে হিসেবে বাসস্ট্যান্ডের বিষয়টি নজরে আনা হবে। মাসব্যাপী অভিযানে বাসস্ট্যান্ডের ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার করবে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। স্ট্যান্ডটি নিয়মিত যাতে পরিচ্ছন্ন রাখা যায়, সে ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।