Thank you for trying Sticky AMP!!

যমুনার পানি আবার বাড়ছে। তাই অপরিপক্ব পাট কেটে নিচ্ছেন চরাঞ্চলের কৃষকেরা। সম্প্রতি বগুড়ার শিমুলতাইড় চরে

যমুনায় আবারও বাড়ছে পানি ভাঙছে বসতভিটা ও জমি

ভাঙন বেশি হচ্ছে দীঘাপাড়া, নয়াপাড়া, করমজাপাড়া, মানিকদাইড়, হাটবাড়ি ও দলিকার চরে। কৃষকেরা জমি থেকে তড়িঘড়ি করে পাট কেটে নিচ্ছেন।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীতে আবারও বাড়ছে পানি। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙছে দুর্গম চরের লোকালয়, ফসলি জমি, বসতি, জনপদ। বন্যার ঢলের পানিতে বসতঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ায় আশ্রয় হারানোর ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে আবারও নদীভাঙনে দিশাহারা চরাঞ্চলের মানুষ। ভাঙন লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসায় আশ্রয় হারানোর শঙ্কায় দিন কাটছে হাজারো মানুষের।

হাটশেরপুর ইউনিয়নের দীঘাপাড়া চরের টুলি বেওয়ার বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই। স্বামী মোহাম্মদ তরফদার মারা গেছেন দুই যুগ আগে। ছেলে শাহাবুল তরফদারের সংসারে থাকেন তিনি। সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের বেনীপুর চরে স্বামীর বসতঘর, আবাদি জমি আর গরু ছিল। এখন নিঃস্ব এই বৃদ্ধা। ছেলে শাহাবুল অন্যের বাড়িতে দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালান।

টুলি বেওয়া বলেন, ‘বেনীপুর চরের বসতঘর যমুনাত ভাঙচে ম্যালাদিন আগত (অনেক দিন আগে)। ছয় বিঘা আবাদি জমিও আচলো। যমুনার ভাঙনে সব হারানার পর সেটি থ্যাকে বসতঘর লিয়ে আসনো চকরতিনাথ চরত। পাঁচ বছর আগত সেই বসতঘরও যমুনা গিলল। তারপর ওঠনো দীঘাপাড়া চরত। বানের পানি ঘরত আসায় সেই ঘরকোনাও তিন সপ্তাহ আগে যমুনার প্যাটত গেল। ঘর ভাঙে লিয়ে কোনো রকমে উঠচি করমজাপাড়া চরত। এখন আবার যমুনাত ভাঙন শুরু হচে। কূল ভাঙে নদী কোনটে যায়্যা ঠেকপি বুঝবার পারিচ্চি না।’

সখিতন বেওয়ার বয়স ৯০-এর বেশি। স্বামী আরব আলী মারা গেছেন দুই যুগ আগে। দুই কুলে আপন বলতে এখন কেউ নেই তাঁর। অন্যের বাড়িতে চেয়ে সংসার চলে। যমুনার দুর্গম দলিকার চরে নির্জন কুঁড়েঘরে বসবাস। যমুনার ঢলে পানিবন্দী হয়ে পড়ায় উঠেছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। দুই সপ্তাহ পর ঢলের পানি সরে যাওয়ায় ফিরেছেন ঘরে। তিনি বলেন, ‘ম্যালা কষ্ট করিচ্চি বাপ। বানের পানি ঘরত ওঠার পর কোনো রকমে ইশকুল ঘরত উঠচি। ঘরত খাবার নাই, পানির কষ্ট। ঘরত ফিরতে না ফিরতেই যমুনার ভাঙন শুরু হচে।’

চরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুনের মাঝামাঝি থেকে যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করে। নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হয় নদীভাঙন। এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক বসতি নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে। ২১ জুন পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২২ জুন থেকে পানি কমতে শুরু করে। ৩০ জুন থেকে আরেক দফা পানি বাড়তে শুরু করেছে যমুনায়। গত বুধবার যমুনা নদীতে পানি বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও শুক্রবার পানির অবস্থান ছিল বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচে। দুই দিনের ব্যবধানে পানি বেড়েছে ৩৭ সেন্টিমিটার।

বৃহস্পতিবার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের দুর্গম হাটবাড়ি, চর দলিকা, ফাজিলপুর, মানিকদাইড়, হাটশেরপুর ইউনিয়নের দীঘাপাড়া চর, নয়াপাড়া চর, করমজাপাড়া চর, কাজলা ইউনিয়নের বেনীপুর চর, কুড়িপাড়া এবং টেংরাকুঁড়া চর ঘুরে নদীভাঙনের চিত্র দেখা গেছে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। এতে তীরের মাটি ও বালুর স্তূপ ধসে পড়ছে নদীতে। ভাঙন বেশি হচ্ছে দীঘাপাড়া, নয়াপাড়া, করমজাপাড়া, মানিকদাইড়, হাটবাড়ি ও দলিকার চরে। ভাঙনকবলিত চরের কৃষকেরা জমি থেকে তড়িঘড়ি করে পাট কেটে নিচ্ছেন। অনেকে বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।

দলিকার চরের কৃষক আবদুল শেখ (৭০) বলেন, তাঁর ১২ বিঘা জমি ছিল। যমুনার ভাঙনে সব শেষ। দুই বছর আগে দলিকার চরে এসে ঘর বানান। এখন ভাঙন সেই ঘরের দিকে এগোচ্ছে। এ নিয়ে ২৪ বার তাঁর ঘর ভেঙেছে।

হাটবাড়ি চরের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, কয়েক যুগ আগে হাটবাড়ি চরে বসতি গড়ে উঠেছিল। এখানে ৪৫০ পরিবারের বসবাস। স্কুল, মসজিদ, লোকালয় কত কিছু গড়ে উঠেছিল। দুই বছর আগে যমুনার ভাঙনে সব বিলীন। কূলকিনারা না পেয়ে যে যেভাবে পেরেছে আশপাশের চরে ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙন বন্ধ করতে এখন ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।