Thank you for trying Sticky AMP!!

যশোরের গ্রামে এডিসের লার্ভা

যশোর জেলার অন্তত চারটি গ্রামে ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী এডিস মশার অস্তিত্ব পেয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। যশোর শহরেও ৩৩টি স্থানে লার্ভা পেয়েছে তারা। ঢাকার বাইরে বর্তমানে এই জেলাতেই বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে।

পবিত্র ঈদুল আজহার পরপর যশোরে বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ায় এডিস মশা নিয়ে জরিপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। কার্যালয়ের নিজস্ব কীটতত্ত্ববিদ এই জরিপে নেতৃত্ব দেন। আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তারা যশোর পৌর এলাকা, কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলায় জরিপ করে। যশোর শহর এলাকায় ১২০টি স্থান থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে জরিপ দল। এর মধ্যে ৩৩টি স্থানে তারা এডিস মশার লার্ভা পেয়েছিল।

জরিপে ডেঙ্গুর ভাইরাসবাহী এডিস ইজিপটাইর লার্ভা পাওয়া গেছে জানিয়ে সিভিল সার্জন দিলীপ কুমার রায় গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা–যশোর মহাসড়কের একটি টায়ারের দোকানে ১৩টি জায়গায় লার্ভা পেয়েছিলাম।’ জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ওই দোকানের মালিককে জরিমানাও করা হয় বলে সিভিল সার্জন জানান।

দিলীপ কুমার রায় বলেন, যশোরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বড় অংশ ছিল কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগরের। এর মধ্যে কেশবপুর ও মনিরামপুরে ১০টি করে ২০টি স্থান থেকে পানি নিয়ে লার্ভা পরীক্ষা করা হয়। পানির আটটি নমুনায় লার্ভা পাওয়া যায়। তার মধ্যে চারটি নমুনা ছিল চারটি গ্রামের। কেশবপুরের দুটি গ্রাম ও মনিরামপুরের দুটি গ্রাম।

এডিস মশার দুটি প্রজাতি—এডিস ইজিপটাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস। ডেঙ্গু ভাইরাস প্রধানত এডিস ইজিপটাইয়ের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়। কম হলেও এডিস অ্যালবোপিকটাসও ডেঙ্গু ছড়ায়। গ্রামাঞ্চলে এডিস অ্যালবোপিকটাস বেশি। এডিস ইজিপটাই বেশি শহর এলাকায়।

কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর চৌধুরী বেশ কিছু দিন ধরে বলে আসছেন, গ্রামেও এডিস ইজিপটাই মশা আছে। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যশোরের এই জরিপ বলছে, এডিস মশা সমগ্র দেশের জন্য এখন উদ্বেগের বিষয়। সারা দেশে জরিপ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

গতকাল যশোরে ৪৯ জন নতুন রোগী সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ঢাকার বাইরে আর কোনো জেলায় এত রোগী ভর্তি হয়নি। যশোরে বেশি রোগী ভর্তি হওয়ার এই ধারা কয়েক দিন ধরেই দেখা গেছে। এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৬৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। অন্যদিকে খুলনার সিভিল সার্জন বলেছেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর একটি অংশ যশোরের।

যশোরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি কেন—এই প্রশ্নের উত্তরে সিভিল সার্জন দিলীপ কুমার রায় বলেন, যশোর শহরে অসংখ্য বাস, ট্রাক স্টান্ড রয়েছে। আছে রেলস্টেশন। এসব স্থানে মশা বেশি থাকে। দ্বিতীয়ত, কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগর—এই তিনটি উপজেলায় জলাবদ্ধতার সমস্যা আছে, যা মশার বংশবৃদ্ধির সহায়ক।

আরও দুজনের মৃত্যু

যশোরের চৌগাছা উপজেলার বাগাড়দাড়ি গ্রামে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সকালে আবদুল ওয়াদুদ (৪৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। ওয়াদুদের ভাই ইমাদুল হক জানান, ঢাকায় ডেঙ্গুর চিকিৎসা শেষে ওয়াদুদ গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। কিন্তু পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আবারও ঢাকার একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে তাঁকে বাড়িতে আনার পর গতকাল মারা যান।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার স্কুলছাত্রী রুবাইয়া আক্তার (১১) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছে। রুবাইয়া উপজেলার রূপসা ওয়াহেদ আলী উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

রুবাইয়ার মামা ইউনুস আলী প্রথম আলোকে বলেন, রুবাইয়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শুক্রবার দুপুরে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে প্রথমে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে শয্যা না পাওয়ায় তাকে উত্তরায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত আটটার দিকে তার মৃত্যু হয়।

এ নিয়ে ২০৫ জন ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য প্রথম আলো পেয়েছে। মৃত ব্যক্তির স্বজন ও হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো এসব মৃত্যুর সংখ্যা হিসাব করে। তবে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এ পর্যন্ত ১৯২টি মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে ৯৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে আইইডিসিআর বলেছে, ৫৭টি মৃত্যুর নিশ্চিত কারণ ছিল ডেঙ্গু।

সরকারি হিসাবে গতকাল ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ৬০৭ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। আর এ বছর মোট ৭৫ হাজার ৭৫৩ জন রোগী এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।