Thank you for trying Sticky AMP!!

যুবলীগ নেতার নিষ্ঠুরতায় পঙ্গু জীবন, পুলিশ চুপ

যুবলীগ নেতা গোলাম মওলা

তুচ্ছ কারণে মানুষকে মারধরের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল যুবলীগ নেতা গোলাম মওলা ওরফে মনির বিরুদ্ধে। জামালপুর জেলা যুবলীগের সদস্য হওয়ার পরে তিনি ও তাঁর বাহিনী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে বলে আতঙ্কে গ্রামবাসী। গোলাম মওলার নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে আইনজীবীর সহকারী মনসুর রহমান এক পা হারিয়ে এখন পঙ্গু জীবন কাটাচ্ছেন। আরও অনেকেই মারধরের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ দিলেও পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের সাতকুড়া গ্রামের ওই যুবলীগ নেতা গোলাম মওলা ও তাঁর বাহিনী জমি নিয়ে বিরোধের জেরে একই গ্রামের মনসুরের ওপর গত ২৬ এপ্রিল হামলা করে। রড দিয়ে পিটিয়ে, গুঁতিয়ে মনসুরের দুটি পা ও একটি হাত গুঁড়িয়ে দেন মওলা। এরপর মনসুরের বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়। দীর্ঘ আড়াই মাস ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। এখনো ভাঙা হাত-পা দুটি স্বাভাবিক নড়াচড়াই করতে পারেন না। বিছানায় কাটছে তাঁর দিন। আর ওই যুবলীগ নেতা তাঁকে পঙ্গু করেই ক্ষান্ত হননি, এখন তাঁর মেয়ে ও ছেলেকে উঠিয়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। চরম আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে পরিবারটির।

মনসুর আলমের দাবি, তাঁর ৪ একর ৩৮ শতাংশ জমির ওপর নজর পড়েছিল যুবলীগ নেতা গোলাম মওলা। এরপর স্থানীয় নারকেলী এলাকায় তাঁর দুটি দোকানঘরও দখল করে নেন ওই যুবলীগ নেতা। তাঁর পরিবারের সদস্যরা নারকেলী এলাকায় যেতেও পারেন না।

মনসুরকে পঙ্গু করে দেওয়ার ঘটনায় গত ১৩ মে তাঁর বড় ভাইয়ের ছেলে শওকত হোসেন যুবলীগ নেতা গোলাম মওলাকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করেন। কিন্তু পুলিশ একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করেনি। পরে আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে এখন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জামালপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলী আকবর প্রথম আলোকে বলেন, মামলা দায়ের হওয়ার পরই আসামিরা আদালত থেকে জামিন নেন। ফলে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

মনসুরের মতো পঙ্গু না হলেও ১৭ আগস্ট ওই যুবলীগ নেতার মারধরের শিকার হয়েছেন তিতপল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিমের ছেলে আরিফ হোসেন। শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ইজিবাইকে যাচ্ছিলেন। সিনেমার স্টাইলে মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁর ইজিবাইকের পথ আটকে তাঁকে নামিয়ে বেদম মারধর করা হয়। একইভাবে সম্প্রতি নারকেলী এলাকার কাউসার আহম্মেদ নামের আরেক শিক্ষার্থীকেও রাস্তায় ফেলে গোলাম মওলা ও তাঁর সহযোগীরা লোহার পাইপ দিয়ে নির্মমভাবে পেটায়। কাউসার আহম্মেদ বলেন, ‘আমার দুটি পা একদম থেঁতলে দিয়েছিল। বহুদিন চিকিৎসা করে ভালো হয়েছি।’ সম্প্রতি দিগপাইত এলাকার আল আমিন নামের এক শিক্ষার্থীকে উঠিয়ে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করেন গোলাম মওলা। আল আমিনের বড় বোন আলপনার দাবি, মনসুর রহমানের আত্মীয় হওয়ার সুবাদেই তাঁর ভাইকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন গোলাম মওলা।

তবে যোগাযোগ করা হলে গোলাম মওলা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একজন সমাজসেবক। সব সময় এলাকায় ভালো কাজ করেন। তাঁর কোনো বাহিনী নেই। যেসব রাজনৈতিক নেতা তাঁর কারণে সুবিধা করতে পারেন না, তাঁরাই এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।


মনসুরকে মারধরের অভিযোগও অস্বীকার করে গোলাম মওলা বলেন, ‘তাঁরে মারিও নাই, তাঁর পরিবারকে হুমকিও দেইনি। তারপরও আমার নামে মিথ্যা মামলা করছে।’