Thank you for trying Sticky AMP!!

যে কর্নারে ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস

কলাপাড়ায় পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় গড়ে তোলা বঙ্গবন্ধু কর্নার

ছোট্ট এক টুকরা জায়গাজুড়ে কর্নার। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস এবং এর বাঁকে বাঁকে জড়িয়ে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনকে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় নির্মিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (বিসিপিসিএল) পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় কর্নারটির অবস্থান। ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের এ কর্নারের স্থাপত্যশৈলী, সৃজনশীলতা এবং অবয়ব মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের।

স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান দ্য টাইমস অর্গানাইজেশন এটি গড়ার কাজ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির স্থপতি মির্জা শাহ্পার জলিল এবং আশরাফ মাহমুদের নকশায় পুরো কাজটি হয়েছে। ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। এর পর থেকে এটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, কর্নারের পশ্চিম পাশের দেয়ালে ব্রোঞ্জের তৈরি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আঙুল উঁচানো একটি আবক্ষ ম্যুরাল। এর পাশে ওই ভাষণের ‘আর যদি একটা গুলি চলে’ নির্দেশিত লাইনটি দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘৭১’। আর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের ওপর মুক্তিযুদ্ধে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণের রূপক হিসেবে দেখাতে গড়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্রোঞ্জের তৈরি একটি ম্যুরাল। পুরো দেয়ালে এভাবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চিত্রায়ণের নকশা করেছেন চিত্রশিল্পী নায়েব উদ্দিন আহমেদ।

এখানকার দক্ষিণ পাশের দেয়ালে ব্রোঞ্জের অক্ষরে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়পর্বে বঙ্গবন্ধুর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির গ্রাফিক্যালি কম্পোজ রয়েছে। আর এর পাশেই স্থান পেয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্ম, বেড়ে ওঠা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়।

কক্ষটির ঠিক মাঝখানে ব্রোঞ্জের তৈরি একটি বৃক্ষ, যার কাণ্ডের সঙ্গে ব্রোঞ্জ প্লেটের ওপর গ্রানাইটের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর একটি ‘ছায়া ভাস্কর্য’ স্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর্যের চারপাশে ঘোরানো কাচের মাধ্যমে শেখ মুজিবের খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলি উঠে এসেছে। এ ঘোরানো কাচের বলয়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সময় চাকা’। বিশ্বমানচিত্রের ঠিক বাংলাদেশ অংশে বসানো হয়েছে বৃক্ষের মূলকে। আর বাংলাদেশের অভ্যুদয় বোঝাতে বিশ্বমানচিত্রের বাংলাদেশ অংশকে একটু উঁচুতে স্থাপিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর শোককে শক্তিতে রূপান্তরের প্রতীক হিসেবে কর্নারটির পুরো আবহ তৈরি করা হয়েছে কালো রঙের পটভূমিতে।

কর্নারের ‘বই পড়ার কোণ’

কর্নারের এক পাশে রয়েছে ‘বই পড়ার কোণ’। সেখানে স্থান পেয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মূল সংবিধানের অনুলিপি। এ ছাড়া রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা বিভিন্ন লেখকের বই ও গবেষণাধর্মী বই। বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর তৈরি করা একটি ই-বুকও রাখা হয়েছে এক পাশে, যার বোতাম টিপলে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বিশদভাবে ফুটে ওঠে।

এ কর্নারের বিষয়ে কথা হয় স্থপতি মির্জা শাহ্পার জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কর্নারের কম্পোজিশন মূলত জীবন, জ্ঞান, ক্ষমতা ও সমৃদ্ধির প্রতীক বৃক্ষকে ঘিরে। বীজ থেকে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত করে বৃক্ষ। এরপর পল্লবিত হয়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বৃহত্তর জ্ঞান, শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতার জন্য পরিপক্ব হয়।’

স্থপতি মির্জা শাহ্পার জলিল আরও বলেন, ‘এখানে আমরা চেষ্টা করেছি বৃক্ষকে বঙ্গবন্ধুর জীবনের রূপক হিসেবে চিত্রিত করতে। ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পথচলা, তাঁর অনন্যতা এবং সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে একটি স্বাধীন জাতিতে পরিণত করার যে স্বপ্ন, সেটার বাস্তবায়নের সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে চেয়েছি আমরা।’

এ বিষয়ে বিসিপিসিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে জাতির পিতা যে অবদান রেখেছেন, সংগ্রাম করে গেছেন, তা মানুষের স্মৃতিপটে তুলে ধরার জন্য আমাদের এ উদ্যোগ। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সুন্দরভাবে কর্নারটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আসা দেশি-বিদেশি লোকজন এ কর্নার পরিদর্শন করে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, বাঙালি জাতির অর্জন এবং বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে সহজে জানতে পারবেন।’