Thank you for trying Sticky AMP!!

যে পূজায় সবকিছু নারীদের হাতে

চট্টগ্রাম বিভাগে প্রথম খাগড়াছড়ির শ্রী শ্রী ভুবনেশ্বরী কালীমন্দিরে দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন কমিটিতে নারীরা। তাঁরা পূজার সব কাজ করছেন। নারীরা মণ্ডপের কাজ করতে ব্যস্ত। গতকাল খাগড়াছড়ি শহরের শ্রীশ্রী ভুবনেশ্বরী কালীমন্দিরে। নীরব চৌধুরী

একদল পূজার বাজার নিয়ে মণ্ডপে ঢুকছেন। আরেক দল তোরণ তৈরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কেউ প্যান্ডেল সাজাচ্ছেন, কেউ বা ব্যস্ত মণ্ডপের সাজসজ্জার কাজে। এমন কাজে যাঁদের দম ফেলার ফুরসত নেই তাঁরা সবাই নারী। গতকাল বুধবার সকালে খাগড়াছড়ির আনন্দনগরের ভুবনেশ্বরী কালীমন্দির মণ্ডপে ঢুকতেই দেখা গেল এমন ব্যতিক্রমধর্মী দৃশ্য। এখানে পূজার আয়োজন সফল করার দায়িত্বে আছেন নারীরা। পূজার সব কাজের ভার তাঁদের ওপর। 

 এভাবে নারীদের নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি শহরে এর আগে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিষয়টি এখন আনন্দনগর এলাকার লোকজনের মুখে মুখে। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ ছিল এলাকার বাসিন্দাদের মনে। তবে সে সন্দেহ এখন কেটে গেছে। এলাকার ১২১ জন নারী উৎসব সফল করার কাজে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন। 

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেবী দুর্গার বোধন। শুক্রবার মহাষষ্ঠী। দেশজুড়ে পূজার মণ্ডপে ব্যস্ততা এখন স্বাভাবিক দৃশ্য। সেসব আয়োজনের পুরোভাগেই থাকেন পুরুষ স্বেচ্ছাসেবীরা। ভুবনেশ্বরী কালীমন্দিরের মণ্ডপে কেন তার উল্টো চিত্র? জানতে চাইলে উপস্থিত নারী কর্মীরা জানালেন ভেতরের কথা। 

জানা গেল, শান্তিনগর ভুবনেশ্বরী কালী মন্দির প্রাঙ্গণের মণ্ডপে ১৮ বছর ধরে দুর্গাপূজা হয়ে আসছিল। কিন্তু এই বছর পূজা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এলাকাবাসী। সেই সময় এলাকার নারীরা এগিয়ে আসেন। পূজা করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। 

মণ্ডপের সামনে কথা হয় পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি চিত্রা মল্লিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে এবার বাজার করা থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা পর্যন্ত সব কাজ নারীরাই করেছেন। প্রথম অবস্থায় এলাকার কিছু পুরুষ বিষয়টি মেনে নিতে না পারলেও বাধা দেননি। এমনকি নিরুৎসাহিতও করেননি। 

এলাকার পুরুষেরা এ নিয়ে কী ভাবছেন? তাঁরা কী কেবল দর্শক, নাকি সহযোগিতার হাতও বাড়িয়েছেন—জানতে চাইলে সনাতন সমাজকল্যাণ পরিষদে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তমাল তরুণ দাশ বলেন, ‘আনন্দনগর এলাকায় প্রায় ২৫০টি হিন্দু পরিবারের বসবাস। ভুবনেশ্বরী কালী মন্দির মণ্ডপে প্রতিবছর পূজার আয়োজন করেন তাঁরা। এবার এখনকার নারীরাই পূজার দায়িত্বে। সব কাজ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করছেন তাঁরা। তাঁরা যদি পুরুষদের সহযোগিতা কামনা করেন তাহলে আমরা সাহায্য করব।’ 

আনন্দনগর এলাকার বাসিন্দারা জানান, নারীদের নেতৃত্বে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে—এই খবর শোনার পর থেকে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন তাঁরা। নারীরা এমন কঠিন দায়িত্ব নিয়ে সফল হতে পারবেন এমনটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। তবে গত ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে প্রতিমা নিয়ে আসার পর তাঁদের ধারণাই পাল্টে গেছে। সব দেখে মনে হচ্ছে নারীরাই খুব সুন্দরভাবে আয়োজনটি সফল করবেন। কোনো কাজে তাঁরা এখনো পুরুষদের ডাকেননি। নিজেরাই সব কাজ করছেন। 

ভুবনেশ্বরী মন্দির পূজা কমিটির দায়িত্বে থাকা নারীরা বলেন, বাড়ির কাজ শেষ করেই নারীরা মণ্ডপের কাজে হাত লাগান। সবাই নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সব কাজ করছেন। পূজার প্রস্তুতি নিয়েছেন ২৫ দিনের মধ্যে। পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছেন তাঁরা। 

কোনো প্রতিকূলতা ছিল কি না? এমন প্রশ্নে পূজা কমিটির সদস্যদের উত্তর, নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁদের। বিশেষ করে চাঁদা তুলতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। কখনো কখনো শুনেছেন কটু কথাও। তবে তাঁরা দমে যাননি। ভাবছেন এই ধারা বজায় রাখবেন ভবিষ্যতেও। 

পূজা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা মল্লিকা ত্রিপুরা বলেন, মা দুর্গা একজন নারী। তিনি দশভুজা। নারীদের প্রতিটি কাজে প্রথম অবস্থায় বাধা আসবে। তবে সবাইকে এগিয়ে এসে প্রমাণ করতে হবে নারীরা চাইলে সব পারে। ভুবনেশ্বরী কালী মন্দিরের এবার পূজা তার বড় উদাহরণ।