Thank you for trying Sticky AMP!!

রাঙামাটিতে বন্য হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে বন বিভাগ

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ভাসান্যা আদাম ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে বন্য হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ করেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার ভাসান্যা আদাম ইউনিয়নে হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি পরিবারকে সম্প্রতি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে এই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হাতির উৎপাত বেড়ে গেছে। এতে সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গত বছর থেকে এখানে ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ পৌঁছে দেওয়াসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেয় বন বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বন বিভাগ লংগদু ভাসান্যা আদাম ইউপি মাঠে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি পরিবারকে ক্ষতিপূরণের অর্থ তুলে দেয়।

বন বিভাগ ও ভাসান্যা আদাম ইউনিয়নের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে এই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে হাতির উৎপাত বেড়ে যায়। ধান, সবজি খেত ও বাগানের ব্যাপক ক্ষতি করে আসছে হাতির দল। ১২ থেকে ১৩টি হাতি প্রতি রাত ও দিনে লোকালয়ে এসে হামলা করছে। প্রতি বছর গড়ে ৩ থেকে ৪ জনের প্রাণহানি হচ্ছে। অন্তত ২০ জন আহত হন।

এই পরিস্থিতির উত্তরণে গত বছর উত্তর বন বিভাগ ভাসান্যা আদাম ইউনিয়নে নানা কর্মসূচি নেয়। এর মধ্যে ১৩ জন সদস্য নিয়ে হাতি রেসপন্স টিম গঠন, তাঁদের প্রশিক্ষণ, সদস্যদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বন বিভাগের কর্মচারীদের সমন্বয়ে হাতি সুরক্ষা দল গঠন করা হয়। তাঁরা প্রতিদিন হাতি অধ্যুষিত এলাকায় টহল দেন। বিভিন্ন গ্রামে সচেতনতা সভা, বিল বোর্ড ও প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। আর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের কাছে দ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থ পৌঁছে দেওয়া উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ।

২২ মার্চ সকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের কাছে বন বিভাগের ক্ষতিপূরণ চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আ ন ম আবদুল ওয়াদুদ, লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বারেক সরকার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈনুল আবেদীন ও ভাসান্যা আদাম ইউপির চেয়ারম্যান মো. হজরত আলী প্রমুখ।

উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র বলেন, ‘আমরা বন্য হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ পরিবারের কাছে ক্ষতিপূরণ চেক হস্তান্তর করেছি। প্রত্যক পরিবারকে ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনা করে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এর আগে মো. আবদুল মালেক নামে এক ব্যক্তি হাতির হামলায় মারা যান। তাঁর পরিবারকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।’
এই ইউনিয়নের খাগড়াছড়ি গ্রামের মো. পারভেজ আলী বলেন, ‘আমি দ্রুত ক্ষতিপূরণ পেয়ে খুশি। এর আগে এভাবে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি। এখন বাড়িঘর ও ফসলে ক্ষতি দেখেও কৌশলে নিজেকে রক্ষা করি।’

ভাসান্যা আদাম ইউপির চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী বলেন, ‘হাতির সঙ্গে মানুষের দ্বন্দ্ব আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। বন বিভাগের তৎপরতার কারণে এমনটা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। মানুষ দ্রুত ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাচ্ছে, সে জন্য হাতির দল সম্পদ নষ্ট করছে দেখার পরও তাদের তাড়াতে আগ্রাসী কাজ করছেন না। আগে নিজেদের সম্পদ নষ্ট করতে দেখলে মানুষ দল বেঁধে হাতি তাড়াতে চেষ্টা করতেন।’

উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র বলেন, ‘এক বছর ধরে হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব কমাতে কাজ করে যাচ্ছি। আগের তুলনায় এমন ঘটনা অনেক কমেছে। গত এক বছরে একটি হাতির শাবক লোকালয়ে জন্মেছে। সেই শাবক ও মা হাতিকে লোকালয় থেকে বনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া লোকালয়ে এসে অসুস্থ হাতিকে চিকিৎসা দিয়ে বনে পাঠানো হয়েছে। তবে কাপ্তাই লেকের পানি খেতে এসে খাদ থেকে পরে একটি ১০ থেকে ১২ বছরের হাতির মৃত্যু হয়েছে।’