Thank you for trying Sticky AMP!!

রাজশাহীতে লকডাউন বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রস্তুতি

করোনার বিস্তার ঠেকাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে এই লকডাউন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন আজ শুক্রবার সকাল থেকে চলমান বিধিনিষেধ জোরদার করার পাশাপাশি নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে ১৭ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মল, বিপণিবিতান, দোকান, রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে। তবে ওষুধ, কাঁচাবাজার, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন ও সৎকারের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান এই লকডাউনের আওতাবহির্ভূত থাকবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই বিধিনিষেধ চলাকালে বাস, ট্রেনসহ কোনো ধরনের যানবাহন রাজশাহী মহানগরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং রাজশাহী মহানগর থেকে বের হতে পারবে না। তবে আমসহ কৃষিপণ্য, খাদ্যসামগ্রী পরিবহন, রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবাদানকারী পরিবহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

প্রজ্ঞাপনে জনসমাবেশ হয় এমন যেকোনো ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের জমায়েত বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া সব ধরনের পর্যটনস্থল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। এসব বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনের প্রস্তুতি

রাজশাহী নগরে লকডাউন ঘোষণার পর রাত থেকেই রাজশাহী মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকে ব্যাপকভাবে প্রচার শুরু হয়েছে। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, রাত থেকেই লকডাউনের বিষয়ে বিধিনিষেধগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পুলিশ মাইকিং শুরু করেছে। নগরে এই সাত দিন কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, সে বিষয়ে মানুষকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে এই প্রচারণা আরও ব্যাপকভাবে চলছে।
অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস আরও বলেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের ১২ থানার পাশাপাশি লকডাউন বাস্তবায়নে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। মহানগর পুলিশের সঙ্গে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সও কাজ করবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের কাছে আনসার সদস্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। লকডাউন চলাকালে বিধিনিষেধ অনুযায়ী মহানগরের সব প্রবেশপথে পুলিশ শক্তভাবে অবস্থান নেবে। কোনোভাবেই নগরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না এবং নগর থেকেও বাইরে বের হওয়া যাবে না।

এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক। তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন দুটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করতেন। আজ বিকেল থেকে চারটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবেন।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা সার্কিট হাউসে রাত ৯টা থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি সভা শেষে রাজশাহীতে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়ার ঘোষণা দেন বিভাগীয় কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর।

তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, রাজশাহীতে ৩ জুন প্রথমে সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তারপর ৬ জুন আরও দুই ঘণ্টা এগিয়ে বিকেল ৫টা থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এই কদিন তাঁরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন রাজশাহী নগরে করোনা সংক্রমণ কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। তাই তাঁরা রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে আগামীকাল (আজ) শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শুক্রবার বিকেল পাঁচটা থেকে লকডাউন কেন জানতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, অনেকে রাজশাহী এসেছেন, তাঁরা চলে যাবেন। কারও রাজশাহী আসার প্রয়োজন, সে কারণে শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। কারণ, লকডাউনের এই ঘোষণাটি রাতে দেওয়া হলো। অনেকে সেটা হয়তো জানতে পারবেন না। শুক্রবার ৫টার মধ্যে মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কিনতে পারবেন।

ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন, মহানগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহীতে ঈদের পর থেকে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর হারও। ৪ জুন রাজশাহী মেডিকেলে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৬ জনই ছিলেন রাজশাহীর বাসিন্দা। এই জেলায় করোনা শনাক্তের হারও কয়েক দিন ৫০ শতাংশের কাছাকাছি উঠেছে। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ও জিন-এক্সপার্ট মেশিনের করোনা ফলাফল বাদে শুধু পিসিআর ল্যাবে ৫০ শতাংশের বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুও বাড়ছে। এ অবস্থায় রাজশাহী নগরে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ ঘোষণা এল।