রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী অনুপস্থিত থাকায় পেছাল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ
সিলেটে বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলায় কারাবন্দী আসামি আবুল খায়ের রশীদ আহমদের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আবুল খায়েরের জামিন আবেদন করলে বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লব জামিন নামঞ্জুর করেন।
এদিকে সাক্ষীরা অনুপস্থিত থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পিছিয়ে আগামী ৬ অক্টোবর ধার্য করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মজিদ খান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ছিল। কারাবন্দী আসামি আবুল খায়েরকে আদালতে হাজির করা হলে তাঁর পক্ষের আইনজীবী জামিন আবেদন করলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগে গত ৮ জুন ভার্চ্যুয়াল আদালতে আবুল খায়েরের জামিন আবেদন করা হলেও জামিন নামঞ্জুর করেছিলেন বিচারক।
২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নূরানী আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কানাইঘাটের আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭) ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫) পলাতক। কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪) মৃত্যুবরণ করেছেন। আরেক আসামি সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)। তিনি ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীরা জানান, গত বছরের ৭ মে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বারবার পেছানো হয় সাক্ষ্য গ্রহণ। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলার পর সম্প্রতি মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালে গত ২৪ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় ওই দিন সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। এরপর ৮ জুন মামলার পরবর্তী তারিখ ছিল। মামলায় মোট ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীসহ ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি রয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ মনির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় কারাবন্দী দুই আসামির মধ্যে সিলেট কারাগারে আছেন শুধু আবুল খায়ের। সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখে তাঁকে আদালতে হাজির করা হলেও সাক্ষীরা অনুপস্থিতি ছিলেন। এ জন্য সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৬ অক্টোবর নতুন তারিখ ধার্য করা হয়।
অনন্ত বিজয় দাশের ভগ্নিপতি আইনজীবী সমর বিজয় সী শেখর বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এমনিতেই অনেক দিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পড়লেও সাক্ষীরা অনুপস্থিত থাকায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। তিনি মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সাক্ষীদের আদালতে হাজির করতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সহায়তা চেয়েছেন।