Thank you for trying Sticky AMP!!

রাস্তার ধারের চাকভাজা শ্বশুরবাড়িতে বাড়িয়েছে সম্মান

মাগুরা শহরের নতুন বাজার সেতুর ওপর চাকভাজা বিক্রি করেন কবিতা বিশ্বাস

মাগুরা শহরতলির বাটিকাডাঙ্গা গ্রামের কবিতা বিশ্বাসের (২৬) জন্য শহরের রাস্তায় বসে চাকভাজা বিক্রি করা ছিল ‘বড় চ্যালেঞ্জ’। বিশেষ করে শ্বশুরবাড়ি এলাকায়। অন্যদিকে, বাবার বাড়ি থেকেও ছিল এ কাজে না নামার চাপ। কবিতার ভাষায়, ‘মা-বাবা কইছিল, তোর রাস্তায় চাকভাজা বিক্রির কারণে ছোট বোন আর ভাইয়ের বিয়েই হবিনে। তুই বাপের বাড়িও আর আসপিনে।’

এমন কথা শুনেও থেমে যাননি কবিতা। মা–বাবার অভাবের সংসার। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ার পর স্বামীর ঘরেও ছিল অসচ্ছলতা। নানা কারণে ঠিকমতো পড়াশোনাটাও হয়নি। তবে পরিশ্রম করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন কবিতা।

মাগুরা শহরের নতুন বাজার সেতুর ওপর চাকভাজা বিক্রি করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন এই নারী। কবিতার স্বামী তারক নাথও স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় একই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

১০ বছর আগে কবিতার যখন বিয়ে হয়, স্বামী তারক নাথ তখন অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সংসার চলত কোনো রকমে। বিয়ের দুই বছরের মাথায় এই দম্পতির ঘরে আসে এক কন্যাসন্তান। একে তো অভাবের সংসার, তার ওপর ঘরে নতুন সদস্য। দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে কবিতার। তখন থেকেই কিছু করার চেষ্টা। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত করা পড়াশোনাটাও কাজে আসছে না কবিতার। ছোট ব্যবসা করতে গেলেও যে বিনিয়োগ দরকার, সে অর্থও নেই।

পাঁচ বছর আগে এক প্রতিবেশীর সহযোগিতায় কবিতা নেমে পড়েন চাকভাজা তৈরি ও বিক্রির ব্যবসায়। স্থানীয় ভাষায় একে ঝুরিভাজাও বলে। ময়দা, বেসন ও লবণ মিশিয়ে ডুবো তেলে চাকভাজা তৈরি হয়। চানাচুরের মতো দেখতে জিলাপির মতো প্যাঁচে তৈরি চাকভাজা মাগুরা ও আশপাশের এলাকায় বেশ জনপ্রিয় খাবার।

মাগুরা শহরে চাকভাজা বিক্রি করেন কবিতা

চাকভাজা তৈরির কাঁচামাল কিনতে কবিতার খরচ হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। প্রতিদিন বিক্রি করেন প্রায় পাঁচ হাজার টাকার চাকভাজা। কবিতা ও তাঁর স্বামী যৌথভাবে মাসে আয় করেন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। বিক্রি করেন পাইকারিভাবেও।

কবিতা বলছিলেন, শুরুতে ছোট বোন ও ভাইয়ের কথা ভেবে মা–বাবা মানা করেছিলেন। পরে এই চাকভাজা বিক্রির ব্যবসা করেই বোন ও ভাইয়ের বিয়ের খরচ জুগিয়েছেন। ভাইকে ব্যবসার জন্য কিছু পুঁজিও দিয়েছেন। এখন তাঁর মা–বাবা খুশি। আয় করায় শ্বশুরবাড়িতেও বেড়েছে সম্মান।

কবিতা বিশ্বাস বলেন, ‘এভাবে আর কত দিন? আমার একটা স্বপ্ন আছে। একটা দোকান নেব। দোকান নিতি পারলি মেয়েটারে কাছে রাখতি পারবানে। তাতে ব্যবসাটাও ভালো হবেনে, কষ্টটাও কমবেনে।’