Thank you for trying Sticky AMP!!

রোহিঙ্গারা সামাজিকভাবে সংক্রমিত বলে সন্দেহ

করোনাভাইরাস। ছবি: রয়টার্স

কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের শ্রমিকদের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটতে পারে, এমন ভাষ্য স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের। জনপ্রতিনিধিদের দাবিও এ রকম।

সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কার বা কাদের সংস্পর্শে রোহিঙ্গারা আক্রান্ত হয়েছেন, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। আক্রান্ত রোহিঙ্গারাও এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। তবে রোহিঙ্গারা সামাজিকভাবে সংক্রমিত হচ্ছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরে গতকাল আরও একজন রোহিঙ্গা তরুণীর নমুনায় করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। একই শিবিরে এর আগে পাওয়া গেছে আট বছরের এক শিশুসহ চারজন। সব মিলিয়ে আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে দুজন নারী।

>

উখিয়ার শিবিরে আরও এক রোহিঙ্গা তরুণীর নমুনায় করোনার জীবাণু
এই নিয়ে মোট পাঁচজন

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে গতকাল ১৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ২২ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা তরুণী। গতকাল পর্যন্ত কক্সবাজারে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৯৬। এর মধ্যে উখিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ জন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী আবু তোহা এম আর এইচ ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন গতকাল উখিয়ার লম্বাশিয়া ডব্লিউ-২ শিবিরে ১ হাজার ২৬০ পরিবারের আরও সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গাকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আনা হয়েছে। এর আগে একই শিবিরের এফ ব্লকে পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হোম কোয়ারেন্টিনে আনা হয়। বসতি ছেড়ে কোনো রোহিঙ্গা যেন বাইরে যেতে না পারে, সে জন্য কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আরআরআরসি কার্যালয়।

বর্তমানে ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে।

সম্ভাব্য কারণগুলো
রোহিঙ্গা শিবিরে করোনা সংক্রমণের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এ প্রতিবেদক জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, উপজেলা প্রশাসন, রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের কথায় সম্ভাব্য তিনটি কারণের তথ্য উঠে এসেছে।

এক. রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতিদিন ঢুকছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাক। ট্রাকের মালামাল খালাসের ক্ষেত্রে কিছু রোহিঙ্গা শ্রমিক কাজ করেন। ট্রাকচালক, চালকের সহকারী অথবা অন্য কোনো লোকের সংস্পর্শে এসে রোহিঙ্গাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ঘটতে পারে। করোনা আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে এই তিনটি জেলাই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

দুই. রাতের আঁধারে শিবির ছেড়ে বহু রোহিঙ্গা উখিয়া ও টেকনাফের হাটবাজারে কেনাকাটা করতে যায়। অনেকেই আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কাজের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ আছে। রাতের বেলায় স্থানীয় লোকজনের অনেকেরই রোহিঙ্গা শিবিরে যাতায়াত আছে। দুই পক্ষের মেলামেশাতেই এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। জেলায় এ পর্যন্ত ১৯১ জন স্থানীয় বাসিন্দা সংক্রমিত হয়েছেন।

তিন. রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সেবায় জড়িত আছেন দেশি–বিদেশি ১৪০টির মতো বেসরকারি সংস্থার ৩০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী। তাঁদের একটি অংশ কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকায় যাতায়াত করেন। পাশাপাশি শিবিরেও যান। তাঁদের থেকেও ছড়াতে পারে সংক্রমণ। এরই মধ্যে বেসরকারি সংস্থার তিন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

আরআরআরসি কার্যালয়ের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী আবু তোহা এম আর এইচ ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, লকডাউন শুরুর ৪০ দিনে রোহিঙ্গা শিবিরে করোনা ছিল না। এখন পাঁচজন আক্রান্ত। রাতের বেলায় কিছু রোহিঙ্গা আশপাশের এলাকায় যাতায়াত করেন। কেউ ওষুধ কেনেন, কেউ মালামাল। কেউ আবার মাদক বেচাকেনায় জড়িত। হাটবাজারে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাদের মেলামেশা হয়। বলা যায়, ‘আশপাশ’ থেকেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

উখিয়ার ইউএনও মো. নিকারোজ্জামান চৌধুরী মনে করেন, ট্রাকচালক, সহকারী বা বহিরাগত লোকজনের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

৫২টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মোর্চা সিসিএএফ–এর কো-চেয়ারম্যান আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এনজিও কর্মকাণ্ড সীমিত করা হলেও এখন যাঁরা শিবিরে আসা যাওয়া করছেন, তাঁদের তেমন নজরদারিতে আনা হয়নি।