Thank you for trying Sticky AMP!!

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে উখিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নোয়াখালীতে নবগঠিত ভাসানচর থানার উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। হাতিয়ার ভাসানচর, ১৯ ডিসেম্বর দুপুর

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের উখিয়ায় পৌঁছেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে ভাসানচর হয়ে উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে অবতরণ করেন। সঙ্গে আছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বিকেল পাঁচটায় সেখানকার ক্যাম্প-৪ (এক্সটেনশনে) ইনচার্জের কার্যালয়ে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা মাঝির (নেতা) সঙ্গে আশ্রয়শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও বৈঠকে যোগ দেন।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়নি ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ (এপিবিএন)। এ সময় সাংবাদিকদের নাজেহাল, মারধর, ক্যামেরা ও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে উপস্থিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠান বর্জন করে অন্যত্র চলে যান। এর সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিকদের শারীরিকভাবেও নির্যাতন চালায় এপিবিএন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।

ভাসানচর ইস্যু নিয়ে আলোচনা
বৈঠকে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পায়। রোহিঙ্গা নেতারা স্বেচ্ছায় কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে চলে যাওয়ার কারণও তুলে ধরছেন।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দুই দফায় ৩ হাজার ৬৪৬ জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। এখন তৃতীয় দফায় আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ভাসানচরে যেতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উৎসাহ জোগাতে ক্যাম্পের মাঝিরা বড় ভূমিকা রাখছেন। নোয়াখালীর ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা আছে সরকারের।
তৃতীয় দফায় ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জোর প্রস্তুতির কথা স্বীকার করেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা। তিনি বলেন, চলতি জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে এ স্থানান্তর হতে পারে। তবে স্থানান্তরের দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।

দেখা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে বেলা দেড়টার আগেই ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে হাজির হয়েছেন উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরের অন্তত অর্ধশতাধিক মাঝি। তাঁদের কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝি বলেন, বৈঠকে তাঁরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে নিজেদের মনোভাবের কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন। পাশাপাশি ভাসানচরে যাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজার ক্যাম্পে আসার আগে আজ সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে নোয়াখালীর ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে নামেন। সেখানে কক্সবাজার থেকে স্থানান্তর করা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সার্বিক অবস্থা পরিদর্শন ও ভাসানচর থানা উদ্বোধন করেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উখিয়ার বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার রাত আটটায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা-সম্পর্কিত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এ বৈঠকেও ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের বিষয় ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ গুরুত্ব পায়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতা শুরু হলে পরের কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে পালিয়ে আসে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।