Thank you for trying Sticky AMP!!

শহীদ মিনার নেই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

  • সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৮৮টি। শহীদ মিনার নেই ৪৩০টিতে

  • ২৪১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার নেই ৮০টিতে। 

  • মাদ্রাসা আছে ৮০টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার নেই ৭১টিতে।

ফরিদপুরে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষায় কথা বলার জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়ার ৬৯ বছর পরও শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও শিক্ষকদের সূত্রে জানা গেছে, অর্থ বরাদ্দ না থাকাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিনেও এসব স্থাপনা নির্মাণ করা যায়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরে ৪৮ শতাংশ প্রাথমিক, ৩৩ শতাংশ মাধ্যমিক ও ৮৯ শতাংশ মাদ্রাসায় নেই শহীদ মিনার।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৮৮টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৪৫৮টি বিদ্যালয়ে, অর্থাৎ শহীদ মিনার আছে প্রায় ৫২ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (৫১ দশমিক ৫৭)। নেই প্রায় ৪৮ শতাংশ বিদ্যালয়ে।

অর্থ বরাদ্দ না থাকাসহ নানা কারণে দীর্ঘদিনেও ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নির্মাণ করা যায়নি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদ ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কোনো বরাদ্দ নেই। তবে একটি নির্দেশনা এসেছে সব বিদ্যালয়ে একই আকার ও আয়তনের শহীদ মিনার নির্মাণ করতে হবে। যারা নিজস্ব উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মাণ করবে, তাদের জন্যই এই নির্দেশনা।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, ৯টি উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২৪১টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার নেই ৮০টিতে, অর্থাৎ ৩৩ শতাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।

বোয়ালমারী উপজেলায় ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টিতে শহীদ মিনার আছে। আলফাডাঙ্গা উপজেলার ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১টিতে, সদরপুরে ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৬টিতে, মধুখালীতে ৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২২টিতে ও চরভদ্রাসনে ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে শহীদ মিনার রয়েছে। এ ছাড়া নগরকান্দা উপজেলার ১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭টিতে, সদর উপজেলার ৫৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৬টিতে, ভাঙ্গায় ২৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬টিতে এবং সালথায় ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭টিতে শহীদ মিনার আছে।
ফরিদপুর জেলায় মাদ্রাসা আছে ৮০টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৯টিতে। শহীদ মিনার নেই ৭১টিতে, অর্থাৎ ফরিদপুরে ৮৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই।

বোয়ালমারীতে ১৭টি মাদ্রাসার মধ্যে ১টিতে, মধুখালীতে ১১টি মাদ্রাসার মধ্যে ৩টিতে, সদর উপজেলায় ১৩টি মাদ্রাসার মধ্যে ২টিতে, ভাঙ্গায় ১৩টি মাদ্রাসার মধ্যে ২টিতে শহীদ মিনার আছে।

সালথা সাতটি, আলফাডাঙ্গায় সাতটি, সদরপুরে পাঁচটি, চরভদ্রাসনে একটি এবং নগরকান্দায় ছয়টি মাদ্রাসার থাকলেও কোনটিতেই শহীদ মিনার নেই।

শহীদ মিনারের গুরুত্ব তুলে ধরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ ঘোষাল বলেন, ‘বাঙালি চেতনা ও আমাদের জাতিসত্তার প্রথম উন্মেষ ঘটে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। ভাষা শহীদদের প্রতি যথার্থ মর্যাদা দিতে হলে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ জরুরি।’

এ সম্পর্কে ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শিপ্রা গোস্বামী বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, এটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনের শর্তের মধ্যে শহীদ মিনার নির্মাণ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। ভাবতে অবাক লাগে, যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দেয়, সেই জাতির দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।’