Thank you for trying Sticky AMP!!

শিশুটি কাউকে দিয়ে দিতে চায় পরিবার

নবজাতক মেয়েটি। সম্প্রতি তোলা। প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ধর্ষণের শিকার হয়ে জন্ম দেওয়া নবজাতকের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তার কিশোরী মা (১৩) ও স্বজনেরা। কিশোরীর গরিব পরিবার শিশুটির ভরণপোষণে হিমশিম খাচ্ছে। এই অবস্থায় তারা শিশুটি অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
গত ২৭ অক্টোবর রাতে ঠাকুরগাঁও মা ও শিশুস্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই কিশোরী মেয়েসন্তান প্রসব করে। এর আগে ওই কিশোরী তাকে ধর্ষণের অভিযোগে ধুকুরঝাড়ি টাকাহারা এলাকার মোহিন চন্দ্র সিংহের (২৩) বিরুদ্ধে মামলা করে। মোহিনকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
সন্তানসহ ওই কিশোরী তার বাবার বাড়িতে থাকছে। বাবার অভাবের সংসার। তিনি কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বলেন, ‘শুনেছি, নবজাতকের ভরণপোষণের খরচ জোগাতে কিশোরীটির পরিবার হিমশিম খাচ্ছে। আমরা তার পরিবারকে স্থায়ীভাবে সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
গত সোমবার দুপুরে কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা ঘরের বারান্দায় নবজাতকের পরিচর্যা করছেন তার নানি।
নবজাতকের নানা বলেন, তিনি অর্থাভাবে নবজাতকের ভরণপোষণ ঠিকভাবে করাতে পারছেন না। এ কয়েক দিনে শিশুটির দুধ, চিকিৎসা ও ওষুধের পেছনে কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এত টাকা জোগাড় করা তাঁর পক্ষে কষ্টকর। তিনি বলেন, এই বাড়তি খরচ জোগাড় করতে তিনি আগাম শ্রম বিক্রি করেছেন। এতে মজুরি কম।

পাশে দাঁড়িয়ে নবজাতকের নানি কথাগুলো শুনছিলেন। তিনি বললেন, ‘কী করিমো, এলা ওক (শিশুটি) তো ফেলা দিবা পারু না। ছুয়াটার কী দোষ।’ এ সময় কেঁদে ওঠে শিশুটি। এরপর শিশুটিকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলেন তিনি। এক ফাঁকে আক্ষেপ করে তিনি জানালেন, তাঁরা গরিব মানুষ। ওই বাচ্চার মুখ দেখে কি তাঁদের পেট ভরবে? তাঁরা বাচ্চাটিকে অন্য কাউকে দিয়ে দিতে চান।

কথা হয় বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তোরাবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নবজাতকটির পরিবারের সদস্যরা আমার কাছেও এসেছিলেন। সে সময়ও তারা বাচ্চাটি আমার কাছে রেখে যেতে চেয়েছিলেন। পরে তাঁদের বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিই।’

পরিবার ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মোহিন চন্দ্র সিংহ গত ডিসেম্বরে ভয় দেখিয়ে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। এ কথা কাউকে বললে তিনি কিশোরীকে হত্যার হুমকি দেন। কিছুদিন পর শারীরিক পরিবর্তনের কারণে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে কিশোরীটির অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানা যায়। মেয়েটির পরিবার বিষয়টি মোহিনের পরিবারকে জানায়। মোহিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কিশোরীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। পরে নানা অজুহাতে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। পরে কিশোরীর বাবা থানায় ধর্ষণের মামলা করেন। এরপর থেকে মোহিন পলাতক।

ওই কিশোরীর এক চাচাতো ভাই বলেন, ‘আমার চাচা-চাচি স্থানীয় সাংসদ, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও থানার ওসির কাছে ঘটনাটির বিচার চেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত মামলার অভিযোগপত্রও আদালতে জমা দেয়নি পুলিশ।’

জানতে চাইলে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা বালিয়াডাঙ্গী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এখন ডিএনএ টেস্ট করার অপেক্ষায় আছি। আদালতে অনুমতি নিয়ে ডিএনএ টেস্ট করাতে পারলেই এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারব।’