Thank you for trying Sticky AMP!!

শিশুদের সব রাইডই অচল

ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা ‘মোটর কার’।

প্রজাপতির পাখা দুটি ভাঙা। আগে শিশুরা এই প্রজাপতির পিঠে বসে দোল দিত। আর প্রজাপতি পাখা দোলাত। এখন এই প্রজাপতির পিঠে ঠিকমতো বসাই যাচ্ছে না। তবু শিশু সায়মা নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। প্রজাপতির পিঠে উঠে বসল সে। কিন্তু পাখা ভাঙা প্রজাপতি কিছুতেই নড়ে না। সম্প্রতি রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেল।

এই চিড়িয়াখানায় শিশুদের বিনা মূল্যে বিনোদনের জন্য কর্তৃপক্ষ পাঁচ সেট রাইড কিনেছিল। তাতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন শিশু একসঙ্গে খেলতে পারত। ২০১৩ সালে দরপত্রের মাধ্যমে রাজশাহী সিটি করপোরেশন অযান্ত্রিক এই রাইডগুলো সরবরাহ করেছিল। দাম পড়েছিল ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ছিল স্লিপার, মোটর কার, প্রজাপতি, দোলনা ও আরও কিছু অযান্ত্রিক রাইড। পাঁচ বছর না ঘুরতেই এই রাইডগুলো ভেঙে এখন বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু শিশুদের মন মানে না। তারা এই ভাঙা রাইডেই গিয়ে বসছে। জানা গেছে, শিশুরা পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, শিশুদের জন্য উন্মুক্ত বিনোদন রাইডগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। দোলনার স্ট্যান্ড আছে। কিন্তু এক পাশের দোলনায় বসার জায়গাটি খোয়া গেছে। অপর পাশের দোলনায় বসার অর্ধেক জায়গা রয়েছে। ওইটুকুতে বসার জন্যই শিশুদের ভিড় দেখা গেল। প্রজাপতির পাশে একটি মোটর কার রয়েছে। সেটির নিচে স্প্রিং লাগানো। শিশুরা তাতে উঠে দোল দিলেই গাড়িটি দুলতে থাকে। এখন স্প্রিং ঠিক থাকলেও গাড়িটি ভেঙে গেছে। এতে ওঠাই বিপজ্জনক। তারপরও ভয়ে ভয়ে ওই গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করছে শিশুরা।

যে স্লিপারে উঠে শিশু সড়সড় করে নিচে নেমে আসত, সেটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। তবে এমনভাবে ভেঙে রয়েছে যে ওপরে উঠে সড়সড় করে নামতে গেলে শিশুদের জখম হতে হবে। তাই নিচে নামতে না পারলেও সিঁড়ি দিয়ে শিশুরা ওপরে উঠে বসে থাকছে। বেশ কয়েকজন শিশুকে এই রাইডের ওপরে উঠে বসে থাকতে দেখা যায়। যে রাইডে বসে শিশুরা ঘুরত, সেটা একেবারে ভেঙে পড়ে রয়েছে। পার্কের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত অনেক অভিভাবক এখন সেই রাইডটা বসার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছেন।

নেই দোলনার বসার অংশ।

শিশু সায়মার নানি নিজের নাম বলতে চাননি। তবে তিনি এই বিনোদনকেন্দ্র নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২৫ টাকার টিকিট কেটে ঢুকে বাচ্চাটার ভালো লাগার মতো কিছুই পেলাম না।’

রাজশাহী কলেজের ছাত্র আলম শাহীন নিয়ে এসেছেন তাঁর ভাগনিকে নিয়ে ঘুরতে। তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগেই আমার ভাগনি একটি রাইড থেকে পড়ি গিয়েছিল। ব্যথা পেয়েছে। এখানে স্লিপারসহ বেশির ভাগ রাইডই নষ্ট। এটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।’ মোহনপুর থেকে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন রুনা লায়লা। তিনি বলেন, এখানে তো খেলার কিছুই নেই। সব ভাঙা। রাইডগুলো ভালো থাকলে আরও ভালোভাবে বাচ্চারা মজা করতে পারত।

স্কুলশিক্ষক সামির উদ্দিন মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘চার বছর থেকে আমি এখানে ছুটির দিনে মেয়েকে নিয়ে আসি। আজও নিয়ে এসেছি। বাচ্চাদের রাইডগুলো দুই থেকে আড়াই বছর ধরে নষ্ট। আগে তা–ও যা একটু খেলা যেত, এখন তাও যায় না।’

চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি কয়েক দিন হলো দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবেন না। এ ব্যাপারে কিছু জানতে হলে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে কথা বলতে হবে। জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এগুলো ছোটখাটো ব্যাপার। তাঁরা ঠিক করে ফেলবেন।