Thank you for trying Sticky AMP!!

সাইকেলে ঘোরাঘুরি থেকে সমাজকল্যাণের পথে

মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটির সাইকেল রাইড। ছবি: প্রথম আলো

বছর তিন আগের ঘটনা। কিছু তরুণ মিলে চিন্তাভাবনা করলেন সাইকেল নিয়ে দল বেঁধে ঘোরার। এতে তাঁদের দেহ ও মন ভালো থাকবে। সঙ্গে থাকবে মাদক, যৌতুক ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রচারণা। চলবে সমাজকল্যাণমূলক অন্যান্য কাজও।

যেই ভাবনা, সেই কাজ। গঠন করা হলো ‘মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটি’। শুরুর সেই চিন্তাভাবনার মহাসড়ক ধরে অনেকটা এগিয়েছে সংগঠনটি। গত ১১ মার্চ তিন বছরে প্রবেশ করেছে তারা। এরই মধ্যে ঝুলিতে জমেছে অনেক সাফল্যের রেকর্ড।

মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটি সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১১ মার্চ এই সংগঠনের যাত্রা শুরু। আগে থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে অনেক তরুণ সাইকেল চালাতেন। তবে সংখ্যায় খুব বেশি ছিলেন না। তাঁরা ভাবলেন, এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে না চলে একত্রে যদি চলা যায়, তাহলে তাঁদের চিন্তাভাবনা কাজে লাগানো সহজ হবে। কাজগুলোর অনেক বেশি প্রভাব পড়বে সমাজে। শুরুর সময় ছিলেন ৭২ জন সদস্য। এখন তা ৩০০ ছাড়িয়েছে। সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে বাইসাইকেল ও হেলমেট থাকা বাধ্যতামূলক। সদস্য ফি দিতে হয় ২০ টাকা। আর কোনো খরচাপাতি নেই। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার বিকেলে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের সামনে সবাই সমবেত হন। সাড়ে তিনটায় শুরু হয় বৈকালিক সাইকেল রাইড। ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার চলে এই সাইকেল যাত্রা। শহর থেকে শহরতলির নানা দিকে তাঁরা ছুটে যান। সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩৫টি রাইড পরিচালনা করা হয়েছে। প্রতিটি রাইডেই একটি না একটি বিষয় থাকে। কোনোটিতে থাকে মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা। কোনোটিতে যৌতুকের বিরুদ্ধে। আবার কোনোটিতে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। সময়, পরিস্থিতি বিবেচনা করে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে এ প্রচারণা নিয়মিত চলছে।

এ ছাড়া আছে সমাজকল্যাণমূলক নানা কর্মকাণ্ড। এর মধ্যে স্বেচ্ছায় নিয়মিতই রক্ত দিচ্ছেন মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটির সদস্যরা। এর বাইরে গত বছর মৌলভীবাজারে বন্যার্তের পাশে ছিলেন সংগঠনটির সদস্যরা। সদস্যদের পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া রোজায় এতিম শিশুদের ইফতার করানো হয়েছে। শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে পথশিশুদের মধ্যে চকলেট, বিস্কুটসহ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এই তিন বছরে মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটির সদস্যরা অনেক রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। দেশের নানা প্রান্ত ঘুরে যেমন রেকর্ড করেছেন, তেমনি দেশের বাইরে গিয়েও রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন কেউ কেউ। ২০১৮ সালের জুন মাসে সংগঠনটির অ্যাডমিন রাজীব দেসহ তিন সাইক্লিস্ট বাইসাইকেলে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের খারদুংলা পাস সফর করেছেন। এটি বিশ্বের মধ্যে যানবাহন চলাচলের সবচেয়ে উঁচু সড়ক। যাত্রাটা শুরু হয়েছিল কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের সমুদ্রপৃষ্ঠের শূন্য ফুট থেকে। নাম দেওয়া হয় ‘সি টু সামিট হিমালয়ান সাইকেল এক্সপেডিশন’। বাইসাইকেলে করে তাঁরা ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর একে একে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, চণ্ডীগড়, পাঞ্জাব, হিমাচল ও জম্মু-কাশ্মীর ঘোরেন। মোট ৬১ দিনে তাঁরা ৫ হাজার ১১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের খারদুংলায় পৌঁছান। খারদুংলার উচ্চতা ১৮ হাজার ৩৮০ ফুট।

এ ছাড়া হাসান আহমদ নাঈম ও আহমেদ রাকিন মাহী ২৩ দিনে দেশের ৬৪ জেলা সফর করেছেন। ‘ক্রস কান্ট্রি’ কর্মসূচিতে সৌরভ রায়, লিংকন দাস রায় ও টিটো চন্দ্র দে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ সফর করেছেন। অন্যদিকে ভোমরা স্থলবন্দর থেকে তামাবিল স্থলবন্দর সফর করেছেন সৈয়দ রাফিউল ইসলাম, রাজীব দে ও অমিত দাশ। নিপ্পন সূত্রধর হালুয়াঘাট থেকে কুয়াকাটা সফর করেন। মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটির সদস্যরা প্রায় নিয়মিতই একের পর এক সাইকেল চালিয়ে দেশের নানা প্রান্তে ছুটছেন। নতুন নতুন সাফল্যের কৃতিত্ব সংগঠনের ঝুলিতে ভরছেন।

সংগঠনের তিন বছর পূর্তির অনুষ্ঠানও তাঁরা করেছেন জাঁকজমকের সঙ্গে। রঙিন সাইকেল নিয়ে ঘুরেছেন শহরের বিভিন্ন সড়ক। স্থানীয় পৌর জনমিলন কেন্দ্রে পুরস্কার বিতরণসহ দিনব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। উৎসবে কাটিয়েছেন সবাই এক দিন। এতে পুরো জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সাইক্লিস্টরা সমবেত হয়েছিলেন। এখান থেকে তাঁরা কুড়িয়েছেন সামনে চলার আরও উদ্যম, আরও প্রেরণা। সাইকেল চালিয়ে শুধু নিজেরাই সুস্থ থাকবেন তা নয়, আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন, এই আশা তাঁদের বুকে।

মৌলভীবাজার সাইক্লিং কমিউনিটির অন্যতম অ্যাডমিন ইমন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শরীরচর্চার অংশ হিসেবে আমরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে সাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি করা। এতে মন ভালো থাকে। শরীর সুস্থ থাকে। সাইক্লিং কমিউনিটির সদস্যরা মাদক গ্রহণ থেকে দূরে থাকেন। এ ছাড়া যৌতুক ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী প্রচারণাও আমাদের কাজের অংশ। প্রতি রাইডেই আমরা কোনো না কোনো সমাজ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাই। এ ছাড়া বন্যাসহ নানা দুর্যোগে কমিউনিটির সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়ান। সমাজকল্যাণমূলক নানা কাজ আমরা করে থাকি। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আরও বেশি করতে পারব বলে আশা রাখি।’