Thank you for trying Sticky AMP!!

সাতক্ষীরায় স্লুইসগেটের কপাট নষ্ট, মাছের ঘের ও ঘরবাড়ি প্লাবিত

কালীগঞ্জে সুন্দরখালী স্লুইসগেটের কপাট নষ্ট হয়ে পানি ঢুকে চিংড়ির ঘের ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে সুন্দরখালী স্লুইসগেটের কপাট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নদীর পানি ঢুকে ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। একাকার হয়ে গেছে ৩০টির বেশি চিংড়ি ঘের। ২০-২২টি বাড়ির আঙিনায় পানি থই থই করছে। কয়েকটি বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। পূর্ণিমার জোয়ারে শুক্রবার সকালে হাড়ুয়া নদীর পানিতে ওই সব ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।

স্থানীয় তারালি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, সাতক্ষীরা কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাগীর চর গ্রামটি ভূমিহীন এলাকা নামে পরিচিতি পেয়েছে। সরকারের খাসজমিতে ভূমিহীনদের বসিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ভূমিহীন পল্লি। এ ভূমিহীন পল্লির বাসিন্দারা ছোট ছোট চিংড়ি ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

পানি ঢুকে একাকার হয়ে গেছে ৩০টির বেশি চিংড়ি ঘের। ২০-২২টি বাড়ির আঙিনায় পানি থই থই করছে।

এনামুল হক বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলার তারালি ইউনিয়নের সুন্দরখালী স্লুইসগেটের কপাট দেড় বছর আগে নষ্ট হয়। বিষয়টি তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিভাগ-১-এর বিভাগীয় প্রকৌশলী সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান মল্লিককে একাধিকবার বলেছেন। এমনকি উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাতেও বিষয়টি তুলে তিনি জরুরি ভিত্তিতে জলকপাট মেরামতের জন্য বলেন। সর্বশেষ ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আগে জরুরি যেসব স্লুইসগেট মেরামত করার তালিকা করা হয়, তাতে সুন্দরখালী স্লুইসগেটের নাম ছিল। তারপরও মেরামত না করায় সম্পূর্ণ কপাটটি ছাড়িয়ে বৈরাগীর চর গ্রামে গত বুধবার থেকে পানি ঢুকছে। শুক্রবার পানির গতি প্রবল আকার ধারণ করে কয়েকটি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে বাড়ির আঙিনা ও ঘরে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে তলিয়ে যাবে কয়েক হাজার চিংড়ি ও মাছের ঘের।

কালীগঞ্জে সুন্দরখালী স্লুইসগেটের কপাট নষ্ট হয়ে পানি ঢুকে বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে

বৈরাগীর চর ভূমিহীন পল্লির বাসিন্দা শেখ মোশারফ হোসেন সরকারের কাছ থেকে পাওয়া খাসজমিতে মাছের ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে হাড়ুয়া নদীর সুন্দরখালী স্লুইসগেট নষ্ট। পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান মল্লিককে বলেও কোনো ফল হয়নি। তারপরও ছাড়িয়ে যাওয়া জলকপাটটি তাঁরা দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে কোনো রকমে পানি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। তিন দিন আগে কপাটটি একেবারে ছাড়িয়ে যায়। ফলে পূর্ণিমার জোয়ারে হাড়ুয়া নদীর পানিতে তাঁর নিজের ঘেরসহ ৩০টি ঘের তলিয়ে গেছে। তাঁর বাড়ির আঙিনা দুই ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। রান্নাঘরে পানি ঢুকেছে। মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় কমপক্ষে এক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই করোনার মধ্যে সামনের দিনগুলোতে তাঁর না খেয়ে মরতে হবে।

শেখ মোশারফ হোসেন বলেন, পানি আটকানো না গেলে শুধু বৈরাগীর চর নয়, কাল শনিবার পূর্ণিমায় তালতলা, জোহরাবাদ, হালিরাবাদ, জলমারি, চিংড়িখালী, ভূঁইয়ার চরের মাছের ঘের তলিয়ে যাবে। কয়েক শ মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠবে।

একই গ্রামের আয়ুব আলী বলেন, মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তিনি তাঁর জমিসহ অন্যের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে মোট ছয় বিঘা জমিতে মাছের ঘের করেছিলেন। ঘেরে মাছ ভালো হয়েছিল। শুক্রবার সকালে ঘেরের সব মাছ ভেসে গেছে। এতে কমপক্ষে তাঁর দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। দুই দিন পরে মহাজন এসে ঋণের টাকা ফেরত চাইলে তিনি কী করবেন, তা জানেন না।

একই অবস্থা ওই গ্রামের আবুল কাসেম, আবু বক্কর, মোহর আলী হাবিবুল্লাহ, কওছার আলী গাজী, শহর আলী, আশরাফুল, বাবু, জোহর আলী, মনিরুল ইসলাম, আমজাদ আলী, ওবায়দুল ইসলাম, রাসেদসহ অনেকের। তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে নতুন জলকপাট লাগানোর দাবি জানান।

পাউবোর প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান মল্লিক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি ঘটনা শুনেছেন। তারালি ইউপির চেয়ারম্যান এনামুল হক, ভূমিহীন নেতা শেখ মোশারফ হোসেন একাধিকবার জানিয়েও জলকপাটটি সংস্কার করা হয়নি প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে ওই দায়িত্ব তাঁর নয়। তারপরও তিনি বিকল্প কী করা যায়, দেখতে লোক পাঠাচ্ছেন।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পাউবোর বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, বিষয়টি তাঁকে কেউ জানাননি। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।