Thank you for trying Sticky AMP!!

সাদুল্যাপুরের গ্রামাঞ্চলে চলছে আড্ডা-তাস পেটানো

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে সরকারি নির্দেশ পালনের কোনো বালাই নেই। এখানে আগের মতোই আড্ডা দেওয়া, তাস ও লুডু খেলা চলছে। ছবিটি আজ রোববার উপজেলার নিচপাড়া গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার গ্রামাঞ্চলে সরকারি নির্দেশ পালনের কোনো বালাই নেই। কেউ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, চায়ের দোকানো গাদাগাদি করে আড্ডা চলছে। ফাঁকা জায়গায় বসে চলছে তাস পেটানো ও লুডু খেলা। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী দুজন এই উপজেলার একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাঁদের সংস্পর্শে আসা আরও তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। গোটা জেলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে দেশের পাঁচটি হট স্পটের মধ্যে সাদুল্যাপুর একটি। কিন্তু সাদুল্যাপুরের গ্রামাঞ্চলে কেউ লকডাউনের নিয়ম মানছেন না।

আজ রোববার সকালে সাদুল্যাপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে মানুষের আড্ডা। চায়ের দোকানে ভিড়। অনেক মুদি দোকান খোলা। অনেকে আবার বাড়ির উঠান ও আঙিনায় গাদাগাদি হয়ে বসে গল্পগুজব করছেন।

সকাল ৭টার দিকে উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের হিংগারপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, ১০ থেকে ১২ জন গাদাগাদি করে বসে চা পান করছেন। কারও মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক নেই কেন—জানতে চাইলে মজিবর মিয়া বলেন, ‘আমরা গ্রামের মানুষ। সকালে চা খেয়ে কাজে যাই। সারা দিন জমিতে কাজ করি। আমাদের করোনা হবে না। তাই মাস্ক পরিনি।’

সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একই ইউনিয়নের নিচপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের ফাঁকা একটি জায়গায় কিছু তরুণ কাছাকাছি বসে তাস ও লুডু খেলছে। কারও মুখে মাস্ক নেই। করোনাভাইরাস নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। জানতে চাইলে নিচপাড়া গ্রামের তরুণ রায়হান মিয়া বললেন, ‘পুলিশ উপজেলা শহরে যেতে দেয় না। হাটবাজারে যাওয়া যায় না। তাই বসে বসে লুডু খেলছি।’ একই গ্রামের তরুণ জনি মিয়া বললেন, ‘গ্রামে করোনা নেই। আমাদের কিছু হবে না। এখন কাজ নেই। তাই বসে বসে তাস খেলছি। সময় কাটাচ্ছি।’

সকাল ৮টার দিকে উপজেলার জয়েনপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, কিছু লোক রাস্তার মোড়ে আড্ডা দিচ্ছেন। তাঁরা করোনাভাইরাস নিয়ে গল্প করছেন। কিন্তু সাত থেকে আটজনের মধ্যে কেবল একজনের মুখে মাস্ক আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদের একজন বললেন, ‘সত্যি কথা হলো, গ্রামের অনেক মানুষ করোনা সম্পর্কে জানেন না। করোনার ক্ষতিকর দিক তাঁরা বোঝেন না। প্রশাসন গ্রামে গ্রামে প্রচারও করেনি। শুধু শহরে মাইকিং করা হয়।’ একই গ্রামের কলেজশিক্ষক রেজা মিয়া বললেন, ‘মানুষ করোনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে আমরা প্রবল ঝুঁকির মধ্যে আছি।’

উপজেলার জামালপুর গ্রামের সংস্কৃতিকর্মী জাহাঙ্গীর আলম বললেন, ‘দেশের পাঁচটি হটস্পটের মধ্যে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা একটি। করোনার জন্য উপজেলাটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এখন। কিন্তু প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় গ্রামের মানুষ সকাল থেকেই অবাধে চলাচল করেন। তাঁরা সরকারের কোনো নির্দেশ মানছেন না। এসব লোকজন নিজেকে ও আমাদের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন।’

কেন দোকান খোলা—জানতে চাইলে একই গ্রামের ব্যবসায়ী জলিল আকন্দ বললেন, ‘দোকান দিয়ে আমাদের রুটিরুজি হয়। না খুলে কী করব?’

গ্রামে লোকজনের ভিড় প্রসঙ্গে সাদুল্যাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, ‘আমাদের গাড়িবহর দেখে লোকজন পালিয়ে যান। কিন্তু আমরা চলে আসার পর আবারও আড্ডা জমে।’

আজ সকালে সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নবী নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন প্রতিদিন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে প্রচার চালাচ্ছে। উপজেলা শহরে লোকজনের চলাফেরা ঠেকাতে দফায় দফায় পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলেও গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহরিয়া খান বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে কেউই নিয়ম মানছেন না। এতে উপজেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।’

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এ বি এম আবু হানিফ আজ প্রথম আলোকে বলেন, এ পর্যন্ত গাইবান্ধায় মোট পাঁচজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা ভালোর দিকে।