Thank you for trying Sticky AMP!!

সারা বছর মিলবে সুস্বাদু কাঁঠাল

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত বারি জাতের কাঁঠালগাছে ফল। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এটি মৌসুমি ফল। তাই সব মৌসুমে ফলটির স্বাদ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া মৌসুমে এর সংরক্ষণব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। তাই ফলটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব কমে গেছে। তবে দেশীয় কৃষিবিজ্ঞানীরা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা রোধ করে কাঁঠালের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বাড়াতে কাজ করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় বারোমাসি কাঁঠালের তিনটি জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা।

ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে এ ধরনের কাঁঠাল চাষ সম্প্রসারণের কার্যক্রম। এতে নতুন সম্ভাবনা জেগেছে কাঁঠাল চাষ ঘিরে। বারির বিজ্ঞানীরা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে উচ্চফলনশীল বারোমাসি জাতের কাঁঠাল চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীন ও সাডা নামক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় খাগড়াছড়ির রামগড়, নরসিংদী, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় মাঠপর্যায়ে চলছে এ ধরনের কাঁঠাল চাষ সম্প্রসারণের কাজ। প্রতিটি জেলায় ২৫ জন চাষি ও ৫টি নার্সারির মধ্যে বারি উদ্ভাবিত চারা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ধরনের কাঁঠাল চাষে কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যা পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগ ও উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্যমতে, দেশের সব এলাকাতেই মূলত কাঁঠালের চাষ হয়। তবে ঢাকার উঁচু অঞ্চল, ময়মনসিংহের ভালুকা, ভাওয়াল ও মধুপুরের গড়, সিলেটের পাহাড়ি এলাকা, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে সর্বাধিক পরিমাণে কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। তবে কাঁঠাল মৌসুমি ফল হওয়ায় সাধারণত বছরে তিন মাসের বেশি কাঁঠাল পাওয়া যায় না। কাঁঠালের অর্থনৈতিক ও পুষ্টিগুণের কথা বিবেচনা করে দেশীয় কৃষিবিজ্ঞানীরা সারা বছর কাঁঠাল উৎপাদনের লক্ষ্যে তিনটি কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করে অবমুক্ত করেছেন। এর মধ্যে বারি-১ জাতের উচ্চফলনশীল কাঁঠাল পাওয়া যাবে বছরের মে-জুন, উচ্চফলনশীল অমৌসুমি জাত বারি-২ কাঁঠাল পাওয়া যাবে জানুয়ারি-এপ্রিল এবং নিয়মিত ফল দানকারী উচ্চফলনশীল বারোমাসি বারি-৩ পাওয়া যাবে সেপ্টেম্বর-জুন মাস পর্যন্ত।

উদ্ভাবিত এ তিনটি জাত সারা দেশেই আবাদযোগ্য। বারি-৩–এর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ১৩৩ মেট্রিক টন, বারি-১–এর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ১১৮ মেট্রিক টন ও বারি-২–এর উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৫৮ মেট্রিক টন।

দীর্ঘদিন ধরে কাঁঠাল নিয়ে গবেষণা করছেন গাজীপুরের বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান। তিনি জানান, উদ্ভাবিত তিনটি জাতের মাধ্যমে সারা বছর ধরেই কাঁঠাল পাওয়া যাবে। মৌসুমের বাইরেও অন্যান্য সময় ধরে উৎপাদিত কাঁঠালও হবে খুব সুস্বাদু। এতে যেমন দেশের লোকজন সারা বছর ধরে কাঁঠালের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন, তেমনি অধিক মূল্যে কাঁঠাল বিক্রি করতে পারবেন। দেশের মানুষের পুষ্টি ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বাড়াবে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত কাঁঠালের এই তিন জাত। তিনি আরও জানান, দেশে কাঁঠালের অসংখ্য জাত রয়েছে, কিন্তু এর নির্দিষ্ট কোনো নাম নেই। এর মধ্যে সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য বারোমাসি জাতের কাঁঠাল। এসব কাঁঠালের জাত ধরে রাখার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।