Thank you for trying Sticky AMP!!

সালিসে সমঝোতা করে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পরদিনই লাশ হলেন গৃহবধূ

মৃত্যু

বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করতেন বলে অভিযোগ গৃহবধূ ফাতেমা খাতুনের (২০)। সহ্য করতে না পেরে চলে যান বাবার বাড়ি। বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর এ নিয়ে গ্রামে সালিস বসে। সবাই মিলে ফাতেমাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার জামতলা এলাকায় শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পরদিনই খবর আসে—  ফাতেমা ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।

ফাতেমা সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের নাগগাঁতী গ্রামের আজাদ শেখের মেয়ে। তাঁকে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে পরিবার। একই সঙ্গে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচারের চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৯ জুন (শনিবার) ফতুল্লার জামতলা এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের তামাই গ্রামের সুতার কারখানার মালিক আবু তালেব প্রামাণিকের ছেলে ইয়াসিন প্রামাণিকের (৩০) সঙ্গে ফাতেমার বিয়ে হয়। এই দম্পতির ৯ মাসের একটি ছেলে রয়েছে।

ইয়াসিনের বাড়ি তামাই গ্রামে হলেও তাঁদের পরিবার ফতুল্লার জামতলা এলাকায় বসবাস করেন। বিয়ের পর থেকেই স্বামী, শাশুড়িসহ পরিবারের প্রায় সবাই ফাতেমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছিলেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে তিনি বাবার বাড়িতে চলে আসেন। বেশ কিছুদিন থাকার পর গত শুক্রবার (১৮ জুন) সালিস বৈঠকের মাধ্যমে ফাতেমাকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো হয়। শনিবার সন্ধ্যায় খবর আসে ফাতেমা ‘আত্মহত্যা’ করেছেন।

ওই দিন রাতেই নারায়ণগঞ্জে পৌঁছে লাশ দেখে পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হয়, ফাতেমাকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রোববার বিকেলে ফাতেমার লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা জয়। গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে তামাই কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

ফাতেমার বড় চাচা মজনু শেখ বলেন, দুই বছর আগে বিয়ের সময় ফাতেমা দশম শ্রেণিতে পড়তেন। তখন তাঁর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হতে ৩ মাস বাকি থাকায় বিবাহ নিবন্ধন ছাড়াই ধর্মীয় রীতি মেনে বিয়ে হয়। শুক্রবার সালিসের সময় এই বিয়ে নিবন্ধনের প্রস্তাব করা হলে ইয়াসিনের বাবা আবু তালেব কৌশলে পরে নিবন্ধন করা যাবে বলে প্রস্তাবটি উড়িয়ে দেন। পরিকল্পিতভাবেই ফাতেমাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার পরের দিন অমানবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা এই হত্যার সঠিক বিচার চান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ফাতেমার শ্বশুর আবু তালেব প্রামাণিক বলেন, শনিবার দুপুরের পর নিজের ঘরে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ফাতেমা। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা তখন বাসায় ছিলেন না। অনেকক্ষণ পর শিশুবাচ্চাটি কান্নাকাটি শুরু করলে বাসায় থাকা নারী সদস্যরা অন্য চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখেন, ফাতেমা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ধরে নিচে নামালে দেখা যায়, তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

ফাতেমার বাবা আজাদ শেখ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে শুক্রবার বিকেলে হাসিখুশিভাবেই তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছে। এরপর আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।’
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বেলা দুইটায়। তারা জানতে পারে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায়। এরপর লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ওসি আরও বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশের গলায়, চিবুকে কালো দাগ লক্ষ করা গেছে। একই সঙ্গে তাঁর ঠোঁটে কামড়ের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসাদুজ্জামান জানান, লাশটির ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদন পেতে ৭ থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে।