Thank you for trying Sticky AMP!!

সাহসই আরিফের সম্বল

রিকশাচালক আরিফ

সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে একটি পা হারিয়েছেন। এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করাই দুরূহ। এর মধ্যেই রোজগারে নামেন তিনি। স্রেফ সাহসের জোরে চলে তাঁর ব্যাটারিচালিত রিকশা। এতে পেটে ভাত জোটে, চলে তাঁর সংসার।

তাঁর নাম মো. আরিফ (৩২)। তখন তিনি ২২ বছরের তরুণ। মা-বাবা ও সাত ভাই–বোনের বড় সংসার। বাবা ভূমিহীন কৃষক। সংসারে নিত্য অভাব। বড় দুই ভাই মজুর খাটেন। চার বোনকে পর্যায়ক্রমে বিয়ে দেওয়া হয়। বাবার শরীরের বল কমে আসে। বৃদ্ধ হয়ে পড়েন। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য বাবার হাতে কিছু টাকা তুলে দিতে নছিমন চালাতে শুরু করেন আরিফ। কিন্তু কিছুদিন পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার জিংলাতলী এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। ঢাকাগামী একটি ট্রাকের চাপায় পড়েন। দেড় মাস ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল ও একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাঁর ডান পা কেটে ফেলতে হয়। স্বজন ও বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে চিকিৎসা চলে তাঁর। খরচ হয় পাঁচ লাখের বেশি টাকা। এরপর থেকে পঙ্গুত্বকে বরণ করে শুরু হয় আরিফের অন্য রকম পথচলা। তবে তিনি বসে থাকেননি। আবার রাস্তায় নামেন। এবার তিনি ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক হন।

আরিফের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের মোবারকপুর গ্রামে। তাঁর স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে বড় হবেন। কিন্তু অভাব–অনটনের সংসারে আরিফ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। নেমে পড়েন রোজগারে। এরপর সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। এক পায়ের ওপর ভরসা করেই নেমে পড়েন। প্রথমে ভাড়ায় অন্যের রিকশা চালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু মালিকেরা তাঁর কাছে রিকশা ভাড়া না দিয়ে ফিরিয়ে দিতেন। ২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ১৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা কেনেন তিনি। এখন সেই রিকশা নিয়ে প্রতিদিন রাস্তায় নামেন।

আরিফ বলেন, পা হারানোর পর খুব অসহায় লাগত। ভেবে পাচ্ছিলেন না কীভাবে ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করবেন। কী কাজে লাগবেন তিনি। তবে মরে গেলেও ভিক্ষা করবেন না। ব্যাটারিচালিত রিকশার কথা তাঁর মাথায় আসে। শুরুতে ভাড়ায় রিকশা জোগাড় করাও সমস্যা হয়। কিন্তু পরে নিজেই রিকশা কেনেন। এখন লক্ষ্মীপুর, কলাকোপা, দৌলতপুর এবং মাঝেমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তাঁর এই রিকশা চালান। প্রতিদিন তাঁর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়েই তাঁর সংসার এবং দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলের লেখাপড়া চলছে।

আরিফের স্ত্রী পাখি আক্তার বলেন, স্বামী আরিফের আয়ে তাঁরা দুমুঠো ভাত খেতে পারছেন। স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারছেন।

ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশিদ বলেন, দুর্ঘটনায় একটি পা হারানোর পরও আরিফ থেমে যাননি। তাঁকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। ছয় মাস পরপর কিছু টাকা পাচ্ছেন।