Thank you for trying Sticky AMP!!

সিলেটে দুই দফায় বন্যা, বড় সংকটে অর্থনীতি

১৫ জুন থেকে বন্যায় নগরের প্রায় সব এলাকা প্লাবিত ছিল। অন্তত ৯০ শতাংশ স্থানে লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

সিলেট জেলার মানচিত্র

সিলেটে দুই দফা বন্যায় বড় সংকটে পড়ে গেছে অর্থনীতি। এসব বন্যায় বোরো আর আমন ফলন নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কৃষি, মৎস্য, পর্যটনসহ নানা খাতে ব্যাপক লোকসান হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, বন্যার প্রভাবে এরই মধ্যে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. তাহমিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, এমন খারাপ সময় আগে সিলেটে কখনো আসেনি। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপায় বের করে নিতে হবে। সংকট উত্তরণে ব্যাংকগুলো নানা খাতের ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে পারে।

সিলেট চেম্বারের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে জেলায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হতো। ১৫ জুন থেকে বন্যায় নগরের কিছু অংশ ছাড়া সব এলাকা প্লাবিত হওয়ায় অন্তত ৯০ শতাংশ স্থানে লেনদেন দীর্ঘদিন ধরে পুরোপুরি বন্ধ ছিল। কিছু এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও ৭০ শতাংশ হাটবাজার এখনো প্লাবিত। ফলে ব্যবসায়িক লেনদেন এসব এলাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াবে ৬ হাজার কোটি টাকা

সিলেটে এখনো বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় বিভিন্ন খাতে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, প্রাথমিক হিসাবে এ পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বন্যা শেষে হিসাব করলে এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।

জেলায় মৎস্য খাতে ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ১১ কোটি ৮১ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫০ টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা নির্ধারণ করতে পেরেছেন। এর বাইরে অন্য দপ্তরগুলো এখনো সেভাবে টাকার হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে পারেনি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি হিসাবে জেলায় এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৯৫৪টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর বাইরে অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো ও আসবাবও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, কৃষি, মৎস্য, জনস্বাস্থ্য, প্রাণিসম্পদ, ব্যবসাসহ নানা খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা শেষ হলে জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কাছ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা জানান, জেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় ২৯ হাজার ২৪৯ হেক্টর জমির আউশ ধান ও ১১ হাজার ৯৮০ হেক্টর সবজির খেত তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ২ হাজার ২৬৯ হেক্টর বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সব ধরনের কৃষিজাত পণ্যের খাতও।

সিলেট চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, পর্যটনসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে জেলায় কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, নগরের অন্তত ৬৫ কিলোমিটার সড়ক বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

টাকার হিসাবে এ ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর জানান, তাঁদের অধীনে থাকা সাড়ে ৭ হাজার কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৬০ শতাংশই তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২৭৮টি গ্রামীণ হাটবাজার রয়েছে। এর বাইরে সিলেট নগরসহ উপজেলা সদরেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজার রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ হাটবাজারই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া হাটবাজারের মধ্যে এখনো শতাধিক বাজার পানিতে প্লাবিত বলে ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, বাজার তলিয়ে থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফালাউদ্দিন আলী আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজার হিসেবে কালীঘাট বিখ্যাত। অনেক দোকানের সামনের অংশ এখনো তলিয়ে আছে। এই বাজারে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকার পণ্য পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।

একই অবস্থা জেলার অন্যান্য গ্রামীণ হাটবাজারেরও। দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় গ্রামীণ অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বন্যা শেষ হলে পুঁজির সংকটে তাঁরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।