Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে সিলেটে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কালো পতাকা মিছিলে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। আজ বুধবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে

মোদির সফরের প্রতিবাদে মিছিল, পুলিশের বাধা, আটক ৭

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সিলেটের বাম গণতান্ত্রিক জোটের কালো পতাকা প্রদর্শন ও বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুই নারীসহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বিরোধিতা করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাঘাতের চেষ্টার অভিযোগে সাতজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ। তিনি জানান, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুজন নারী রয়েছেন। তাঁদের সিলেট কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে সিলেটের বাম গণতান্ত্রিক জোটের কালো পতাকা প্রদর্শন ও বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে।

আটক ব্যক্তিরা হলেন বাসদ মার্ক্সবাদী সিলেট জেলার আহ্বায়ক উজ্জ্বল রায়, ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম আহমদ চৌধুরী, ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট মহানগরের সভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদিয়া নওশিন, সাবেক সভাপতি রেজাউর রহমান, ছাত্র ইউনিয়ন নগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক মনিষা ওয়াহিদ ও ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য নিজু আহমেদ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় সমবেত হতে শুরু করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা। এ সময় নেতা-কর্মীরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির আগমন ঠেকাতে প্রতিবাদ জানান। কর্মসূচির একপর্যায়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে কালো পতাকা নিয়ে বন্দরবাজারের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় নেতা-কর্মীরা সামনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ মারমুখী আচরণ করে। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করে ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যান।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে সিলেটে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কালো পতাকা মিছিলে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। আজ বুধবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে

বাম গণতান্ত্রিক জোটের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য প্রণব জ্যোতি পাল বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদির মতো একজন সাম্প্রদায়িক মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ জন্য আমার প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচি দিয়েছিলাম। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কোর্ট পয়েন্টের দিকে রওনা দেওয়ার সময় পুলিশ হামলা চালায়। এ হামলায় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। হামলায় পুলিশের পুরুষ সদস্যরা নারী কর্মীদের ওপর হামলা করেছেন, যা গণতান্ত্রিক দেশে অগণতান্ত্রিক আচরণ।’

প্রণব জ্যোতি পাল বলেন, আজ রাতের মধ্যেই আচক ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়া না হলে সিলেটের সব প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক দল নিয়ে কাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করা হবে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সুমন বলেন, ‘কর্মসূচির শুরুতেই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালন না করতে নানাভাবে বলা হয়। পরবর্তী সময়ে বলা হয় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করতে। একপর্যায়ে বলা হয়, সড়কে যান চলাচলে যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়। এরপর আমরা তাদের কথায় কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করি। পরে আমরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে কালো পতাকা নিয়ে বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্টের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়া নারী সদস্যদের সঙ্গে পুলিশ শালীন আচরণ করেনি। এতে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিপেটা করে আক্রমণ করে।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের অবদান অস্বীকার করার মতো নয় জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভারতের অবদান রয়েছে, সেটি আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। কিন্তু ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদির প্রতি আমাদের আপত্তি রয়েছে। তিনি ভারতের ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি হয়েছে। নানাভাবে সাম্প্রদায়িকতার বন্ধন ক্ষুণ্ন করেছেন। আমরা ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদির আচরণ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তাঁর আগমন মেনে নিতে পারিনি। তাঁর আগমনের প্রতিবাদেই এ কর্মসূচি পালন করেছিলাম।’