Thank you for trying Sticky AMP!!

সুলতান উৎসবের শেষ দিনে নজরকাড়া নৌকাবাইচ

নড়াইলের চিত্রা নদীতে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় সারি গানের আয়োজন করা হয়। ছবি: প্রথম আলো

নড়াইলের চিত্রা নদীর দুই পাড়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। রোদ-বৃষ্টির খেলায় ভ্যাপসা গরম দমিয়ে রাখতে পারেনি এলাকার সুলতানপ্রেমীদের। তাঁরা সবাই ভিড় করেছেন নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে যাঁদের নৌকাবাইচ দেখার সুযোগ হয়নি, তাঁরা গাছের ডালে উঠে বসেন। নদী-তীরবর্তী আশপাশের বাড়ির ছাদও ছিল দর্শকে পরিপূর্ণ।

নড়াইলে চার দিনব্যাপী সুলতান উৎসবের শেষ দিনে গতকাল শনিবার নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কোমল পানীয় প্রাণ আপের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই প্রতিযোগিতা এলাকার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। সাবেক নড়াইল ফেরিঘাটের শেখ রাসেল সেতু থেকে সুলতান সেতু পর্যন্ত তিন কিলোমিটার নদীপথে জমজমাট নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

তবে এই উৎসবের শুরুতে নৌকাবাইচ আয়োজনের সফলতা নিয়ে একটু দ্বিধায় ছিলেন স্থানীয় আয়োজকেরা। সুলতান মেলাকে ঘিরে নড়াইলে একাধিকবার নৌকাবাইচ হয়েছে। কিন্তু অতীতে এবারের মতো প্রতিকূল পরিবেশ ছিল না। কিন্তু শেষমেশ দারুণ সফল এই প্রতিযোগিতা।

নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আহ্বায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান শেখ বললেন, ‘প্রতিযোগিতায় পুরুষ দলে আটটি ও নারী দলে চারটি নৌকা অংশ নেয়। প্রথম দিকে আমরা খুব চিন্তায় ছিলাম। কারণ নদীতে প্রচণ্ড স্রোত। সেই সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। তবে দর্শক ও মাঝি-মাল্লাদের সহযোগিতায় প্রতিযোগিতা সার্থক হয়েছে।’

নড়াইলের চিত্রা নদীতে আয়োজিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। ছবি: প্রথম আলো

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা থেকে বাইচে অংশ দিতে আসা মাল্লা সমশের আলী বলেন, ‘ভ্যাপসা গরম আর নদীর স্রোত আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। প্রতি বছরই এই প্রতিযোগিতায় আমাদের নৌকা অংশ নিয়ে আসছে। আয়োজকদের ব্যবস্থাপনা ভালো। দর্শকদেরও সহযোগিতার মনোভাব ছিল।’

সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আঞ্জুমান আরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথম দিকে প্রচণ্ড গরমে আয়োজনে একটু বিঘ্ন ঘটালেও দর্শক উপস্থিতি দেখে বিস্মিত হয়েছি।’

প্রতিযোগিতা শেষে শহরের বাঁধাঘাট চত্বরে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস বোস, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দীন খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়ারুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মাহাবুবুর রশীদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিম, পৌর মেয়র বিশ্বাস জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘ক্ষণজন্মা এই শিল্পীকে (এস এম সুলতান) জীবদ্দশায় আমরা যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি। তাঁর তুলির আঁচড়ে কী জাদু ছিল, আমরা অনেকেই তা বুঝতে পারিনি।’

জাহিদ আহসান রাসেল আরও বলেন, জীবন্ত সুলতানের চেয়ে মৃত সুলতান অনেক বেশি শক্তিশালী। তাঁর আঁকা চিত্রকর্ম এখন মর্যাদা পাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এই গুণী শিল্পীর চিত্রকর্মগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য যা করণীয়, সব করবে এ সরকার।