Thank you for trying Sticky AMP!!

সেতু-কালভার্ট বন্ধ করে মাছ চাষ, উচ্ছেদে অভিযান

মাছ চাষের জন্য সেতুর নিচে তোলা ইটের দেয়াল অপসারণ করা হচ্ছে। ১৭ জুলাই প্রশাসন এ অভিযান চালায়। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোবিন্দপাড়া এলাকায়। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর বাগমারায় কয়েকটি সেতু ও কালভার্ট বন্ধ করে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষের বিরুদ্ধে অবশেষে অভিযান শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। এতে উপজেলার কমপক্ষে ৩০টি সেতু, জলকপাট, কালভার্টসহ প্রায় ৮ কোটি টাকার সরকারি সম্পদ রক্ষা পাবে।

স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কয়েক বছর ধরে এসব সেতু, জলকপাট ও কালভার্টের পানিপ্রবাহ বন্ধ করে মাছ চাষ করে আসছেন। এ নিয়ে প্রথম আলোয় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এসব সেতু, জলকপাট ও কালভার্ট নির্মাণ করে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আট-দশ বছর ধরে উপজেলার গোবিন্দপাড়া, নরদাশ, দ্বীপপুর, যোগিপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় স্থাপন করা সেতু ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিলে মাছ চাষ করে আসছেন। কালভার্ট ও সেতুর নিচে ইটের দেয়াল তুলে, লোহার খাঁচাসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করা হয়। এর ফলে এসব স্থাপনা হুমকির মুখে পড়ে। গোবিন্দপাড়া, নরদাশ, দ্বীপপুর, সোনাডাঙ্গা এবং যোগিপাড়া ইউনিয়ন এলাকার বেশ কয়েকটি সেতু ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী সেতুগুলোকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এসব সেতুর নিচ দিয়ে পানিপ্রবাহ উন্মুক্ত রাখার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। তবে প্রশাসনের এসব অনুরোধ উপেক্ষা করে মাছ চাষ অব্যাহত থাকে। চলতি মৌসুমেও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আগের মতোই মাছ চাষ শুরু করেন। উপজেলার প্রায় ২০টি বিলে মাছ চাষ শুরু করা হয়। 

উপজেলা প্রশাসন ১৭ জুলাই থেকে আকস্মিক সেতু ও কালভার্টের মুখগুলো খুলে দেওয়ার জন্য অভিযান শুরু করে। ওই দিন সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উপজেলার গোবিন্দপাড়া, আউচপাড়া ও নরদাশ ইউনিয়ন এলাকার বিলগুলোতে অভিযান চালানো হয়। এ সময়ে ওই সব বিলের কয়েকটি কালভার্ট ও সেতুর নিচ থেকে ইটের প্রাচীর অপসারণ ও বাঁশের বেড়া পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে বেনিপুর, জোঁকাবিলসহ আশপাশের কয়েকটি বিলের জলকপাট, কালভার্ট ও সেতুর নিচে এখনো রড ও ইটের প্রাচীর রয়েছে। ওই দিন কয়েকটি কালভার্টের মুখ খুলে দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা হয় এবং উপজেলার অন্য এলাকাতেও এই অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন আজ রোববারের মধ্যে সেতুগুলোর মুখ খুলে দেওয়ার জন্য মাছচাষিদের আহ্বান জানিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় অপসারণ করা না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সেগুলো অপসারণ এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বাগমারা উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সেতু, কালভার্ট ও সড়ক রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। অনেকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেতু ঘেঁষে ও সেতুর পাশে তৈরি করা প্রতিবন্ধকতা এবং প্রাচীর অপসারণের জন্য অনুরোধ করেছেন। এভাবে সেতুর মুখ বন্ধ করার কারণে সেতু ছাড়াও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব অপসারণের মাধ্যমে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি এসব স্থাপনা রক্ষা পাবে।

উপজেলা প্রশাসনের এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিজন কুমার সরকার ও নরদাশ ইউপির চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সেতু ও কালভার্টের মুখ বন্ধ করে মাছ চাষ না করার জন্য তাঁরা অনুরোধ করেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এসব অপসারণে পদক্ষেপ নেওয়ায় সরকারি সম্পদ রক্ষা পাবে। 

অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া বাগমারার ইউএনও জাকিউল ইসলাম বলেন, সেতু ও কালভার্টগুলোকে হুমকিতে ফেলে মাছ চাষ করায় অনেক সেতু ও সড়কের ক্ষতি হয়েছে। জনস্বার্থে ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় অভিযান চালানো হয়েছে। এটা অব্যাহত রাখা হবে। হাতে গোনা কয়েক ব্যক্তির লাভের জন্য সরকারি সম্পদ ক্ষতি করতে দেওয়া হবে না।