Thank you for trying Sticky AMP!!

সেন্ট মার্টিন সমুদ্রসৈকত

সেন্ট মার্টিন: দিনে যেতে পারবেন ১,২৫০ পর্যটক

এ বছর থেকেই পর্যটকের সংখ্যায় বিধিনিষেধের উদ্যোগ। নিবন্ধন নিতে হবে অ্যাপে। আরোপ হতে পারে বাড়তি কর।

প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সেখানে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আসছে মৌসুমে দ্বীপটিতে দিনে ১ হাজার ২৫০ জনের বেশি পর্যটক যেতে পারবেন না।

সাধারণত প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যেতে পারেন। স্থানীয় হিসাবে, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ভরা মৌসুমে দিনে পাঁচ থেকে আট হাজার পর্যটক দ্বীপটিতে যান। তাঁদের একটি অংশ সেখানে রাতযাপন করেন।

পর্যটকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগটি আসে গত মার্চে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায়। সভায় এ বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও পর্যটন করপোরেশনকে।

বেসরকারি বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণে দেশে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন বন্ধ ছিল। এখন সবকিছু চালু হয়েছে। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে আমরা এ বছর থেকেই নিয়ন্ত্রিত পর্যটনের বিষয়টি বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’

সেন্ট মার্টিন নিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপটি পুরোপুরি প্রবালশূন্য হতে পারে। দ্বীপটিতে প্রবাল ছাড়াও বিশ্বজুড়ে বিলুপ্তপ্রায় জলপাই রঙের কাছিম, চার প্রজাতির ডলফিন, বিপন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানা ধরনের বন্য প্রাণীর বাস।

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও বিপুলসংখ্যক পর্যটকের যাতায়াতকে দ্বীপটির অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সেন্ট মার্টিনে পাঁচ বছরের জন্য পর্যটন নিষিদ্ধের সুপারিশও করা হয়েছিল।

সেন্ট মার্টিন ইকো ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশি প্রথম আলোকে বলেন, সেন্ট মার্টিনে পর্যটক ছাড়াও প্রায় ১০ হাজার মানুষ বাস করে। সেখানে পুরোপুরি পর্যটন নিষিদ্ধ করা হলে বহু মানুষের জীবন-জীবিকা সংকটে পড়বে।

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর এরই মধ্যে সেন্ট মার্টিনে বেড়াতে যেতে আগ্রহীদের নিবন্ধনের জন্য একটি অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু করেছে। নিবন্ধন ছাড়া কোনো পর্যটক যাতে সেন্ট মার্টিনে যেতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পর্যটন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হলে সেখানকার পরিবেশ সুরক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ আমরা নিতে পারব।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে হাইকোর্ট সেন্ট মার্টিনকে রক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও বিভিন্ন সময় সেন্ট মার্টিনে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা, হোটেল সরিয়ে নেওয়ার মতো নানা উদ্যোগের কথা শুনিয়েছে। কিন্তু কার্যকর হয়নি। এদিকে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কক্সবাজার দিয়েও সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জাহাজ চালু হয়েছে।

বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, কালক্ষেপণ না করে সেখানকার সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া উচিত।

পরিবেশবাদী ও প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা ও ব্যক্তিরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি রক্ষায় সরকারের উদ্বেগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তার সমালোচনা করেছেন তাঁরা। তাঁরা মনে করছেন, দ্বীপটিতে কী পরিমাণ পর্যটক যাওয়া পরিবেশের জন্য সহনীয়, তা আগে সমীক্ষা করে বের করা উচিত।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের উচিত পুরো দ্বীপকে অধিগ্রহণ করে সেটিকে জীববৈচিত্র্যের জন্য সংরক্ষণ করা। কয়েক বছর সেন্ট মার্টিনে পর্যটন বন্ধ রাখা দরকার। এতে হারানো জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। তারপর সীমিত পর্যটনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।