Thank you for trying Sticky AMP!!

স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটছে শিক্ষার্থীরা

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় গরিব কৃষকের ধান স্বেচ্ছাশ্রমে কেটে দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গত সোমবার চতরা পাথারে। ছবি: প্রথম আলো

নিজের জমির ধান মাঠে, শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দাম কম হওয়ায় কৃষক তা কাটছেন না। বরং দিনমজুরির দাম বেশি হওয়ায় অন্যের ধান কেটে বেড়াচ্ছেন। এ কথা জানতে পেরে বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা দল বেঁধে ওই কৃষকের ধান কেটে দিয়েছে।

এ ঘটনা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা গ্রামের। গত সোমবার শুধু ওই কৃষকের নয়, একই গ্রামের তিন কৃষকের ১ একর ২৩ শতক জমির ধান কেটে দিয়েছে চতরা মাল্টিমিডিয়া ক্যাডেট স্কুল ও চতরা বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার তাদের এ গ্রামের আরও এক কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার কথা।

বিদ্যালয়টির সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাদিবা প্রধান বলে, ‘সবাই মিলে খুব আনন্দে ধান কেটেছি। গরিব কৃষকের উপকার করতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে।’ অষ্টম শ্রেণির আইরিন আখতার বলে, ‘স্যারেরা আমাদের গরিব মানুষের ধান কেটে দিতে বলেন। আমরা খুশি হয়ে কেটে দিয়েছি।’

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাদিবা প্রধান ও আইরিন আখতার বোরোখেতের পাশ দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করত। তারা ১৫ দিন ধরে খেয়াল করে, জমিতে ধান পাকলেও তা কেউ কাটছিলেন না। পাঁচ দিন আগে সেই ধান শিলা ও ঝড়–বৃষ্টিতে কিছুটা ঝরে নষ্ট হয়। বিষয়টি তারা প্রধান শিক্ষক কবিন্দ্র নাথ ভট্টাচার্যকে জানান। কবিন্দ্রও বিষয়টি খেয়াল করেন। বিষয়টি তিনি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তরা বিজ্ঞান ও কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রব প্রধানকে জানান। পরে কবিন্দ্র ও আবদুর রব ওই খেতের চাষিকে খুঁজে বের করেন। তাঁর নাম বাবুল প্রধান। ওই দুজন বাবুলের কাছে ধান না কাটার কারণ জানতে চান। বাবুল প্রধান ওই দুজনকে জানান, অর্ধেক ফসল দেওয়ার বদলে তিনি একই গ্রামের আবু জোয়াদের ৫০ শতক জমি ঠিকা নিয়ে ধান লাগান। কিন্তু বাজারে ধানের দাম নেই। তাই নিশ্চিত লোকসানের ভয়ে তিনি ধান কাটছেন না। বরং এখন কৃষিশ্রমিকের মজুরির দাম বেশি। এ কারণে তিনি অন্যের জমির ধান কেটে বেড়াচ্ছেন।

বিদ্যালয়টির সূত্রে আরও জানা যায়, কবিন্দ্র নাথ ও আবদুর রব বিষয়টি নিয়ে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তখন সবাই মিলে বাবুলের জমির ধান স্বেচ্ছাশ্রমে কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গত সোমবার পাঁচ শিক্ষকসহ ৭১ জন শিক্ষার্থী বাবুলের ৫০ শতক জমির ধান কেটে ঘরে তুলে দেয়। এ সময় আশপাশের আরও দুই গরিব কৃষক সবুজ মিয়া ও এবরা হোসেন নিজেদের জমির ধান টাকার অভাবে কাটতে না পারার বিষয়ে জানান। তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাঁদের ৭৩ শতক জমির ধানও কেটে দেয়।

বিনা টাকায় ধান কেটে ঘরে তুলতে পারায় বাবুল প্রধান বেজায় খুশি। তিনি বলেন, ‘আল্লায়, স্যার ও বাচ্চা ছাওয়াদের যেন খুব ভালো করে।’ বাবুল আরও জানান, ধান চাষের জন্য জমি তৈরিতে তিন দফা চাষে তাঁর ১ হাজার ৭০০ টাকা খরচ হয়েছে। আরও খরচের মধ্যে রয়েছে রোপণে ২ হাজার, সার ও কীটনাশকে ৪ হাজার, পানি সেচে সাড়ে ৩ হাজার, চারা কিনতে দেড় হাজার ও নিড়ানিতে ১ হাজার ৩০০ টাকা। অর্থাৎ তাঁর মোট ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে তাঁকে আরও বাড়তি ৬ হাজার টাকা খরচ করতে হতো।

বাবুল প্রধান বলেন, ওই জমিতে তিনি ৪৫ মণ (প্রতি মণ ২৮ কেজি) ধান পেয়েছেন। বর্তমান বাজারদরে এ ধানের দাম প্রতি মণ ৩২০ টাকা হিসাবে ১৪ হাজার ৪০০ টাকা। ধান কাটা ও মাড়াইয়ের খরচ যোগ করলে ৫০ শতকে তাঁর খরচ পড়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা। এ কারণে তিনি নিজের ধান না কেটে শ্রমিক হিসেবে অন্যের ধান কেটে দিনে ৭০০-৮০০ টাকা রোজগার করছিলেন।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির পরিচালক আবদুর রব প্রধান গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তিন দিন এলাকার গরিব চাষিদের ধান স্বেচ্ছাশ্রমে কেটে ঘরে তুলে দেব। আজ (গতকাল) কারও ধান কাটা হয়নি। বুধবার (আজ) একই গ্রামের আবদুর রউফের ধান কাটার কথা রয়েছে।’