Thank you for trying Sticky AMP!!

স্মার্টফোন কেনার নেশায় কিশোরের ‘অপহরণ’ নাটক

অপহরণ

স্মার্টফোন কেনার নেশায় বাড়ি থেকে পালিয়ে ‘অপহরণ’ নাটক করেছে ১৬ বছরের এক কিশোর। পরে মুক্তিপণ হিসেবে বিকাশের মাধ্যমে প্রথমে ২০ হাজার টাকা, পরক্ষণেই ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে তার মাকে। মুক্তিপণের টাকার জন্য অপহরণকারীরা মারধর করছে, বিকাশে দ্রুত টাকা না পাঠালে তাকে হত্যা করা হবে—মায়ের কাছে এমন কথা বলে দুর্বল করারও চেষ্টা করে। পরে দিশেহারা মা সন্তানকে উদ্ধারে থানায় যান। সেখান থেকে পুলিশ সুপার ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ছেলেটির অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। পরে পুলিশ ছেলেটিকে উদ্ধারে অভিযান চালায়।

অপহরণের নাটক সাজানো এই কিশোরকে গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বনানী বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি বিকাশের দোকানের সামনে থেকে উদ্ধার করে জেলা ডিবির একটি দল। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিবির পরিদর্শক এমরান মাহমুদ। মা–বাবার বিবাহবিচ্ছেদের পর মায়ের সঙ্গে নানাবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছে কিশোরটি। নানাবাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র সে।

এই কিশোরকে বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বনানী বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি বিকাশের দোকানের সামনে থেকে উদ্ধার করে ডিবির একটি দল।

বগুড়া ডিবি পুলিশের পরিদর্শক এমরান মাহমুদ বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি মামাবাড়ি থেকে বের হয়ে ‘নিখোঁজ’ হয় ছেলেটি। তার ব্যবহৃত ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার মা সাদুল্যাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন ছেলে ফোন করে মাকে। জানায়, তাকে অপহরণ করেছে চার মুখোশধারী ব্যক্তি। একটি বাসায় আটকে রেখে তাকে জিম্মি করা হয়েছে। মারধরও করা হচ্ছে। দ্রুত ২০ হাজার টাকা বিকাশে না পাঠালে তাকে হত্যা করা হবে। একটু পরে আবার ফোন দিয়ে ছেলেটি তার মাকে বলে, ২০ হাজার নয়, মুক্তিপণ পাঠাতে হবে ৫০ হাজার টাকা। ৩০ মিনিটের মধ্যে টাকা না পাঠালে তাকে হত্যা করা হবে। এরপর আবার খুদে বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়, ১৭ মিনিটের মধ্যে মুক্তিপণের টাকা পাঠাতে হবে তার নম্বরেই। টাকার জন্য ঘনঘন খুদে বার্তা পাঠিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখা হয়।

সহপাঠী ও বন্ধুরা যখন স্মার্টফোন সেলফি ও ছবি তুলত, ভিডিও করত, তা দেখে আমারও স্মার্টফোন কেনার নেশা জাগে। মায়ের কাছে দু-একবার ফোন কেনার আবদার করি। মা টাকা দেয়নি। মায়ের কাছ থেকে ফোন কেনার টাকা হাতাতে শেষে ফন্দি আঁটি অপহরণ নাটকের।
অপহরণের নাটক সাজানো কিশোর

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা যায়, ছেলেটির অবস্থান বগুড়ায়। বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা ছেলেটিকে দ্রুত উদ্ধারের দায়িত্ব দেন ডিবি পুলিশকে। এরপর তাকে উদ্ধারে মাঠে নামে ডিবি পুলিশ। মুক্তিপণের টাকা গ্রহণের জন্য বিকাশের দোকানে যেতে বলা হয় ছেলেটিকে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বগুড়ার বনানী বাসস্ট্যান্ড এলাকার বিকাশের দোকানের আশপাশে ওত পাতে ডিবির একটি দল। বিকাশের দোকানে টাকা তুলতে আসে একজন কিশোর। তাকে আটকের পর জানা যায়, টাকা তুলতে আসা কিশোরই ‘অপহৃত’ সেই স্কুলছাত্র। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য। নিজেই বাড়ি থেকে পালিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়েছে। আর এই অপহরণ নাটক সাজানোর নেপথ্যে রয়েছে স্মার্টফোন কেনার নেশা।

ছেলেটি জানায়, সহপাঠী ও বন্ধুরা যখন স্মার্টফোন সেলফি ও ছবি তুলত, ভিডিও করত, তা দেখে তারও স্মার্টফোন কেনার নেশা জাগে। মায়ের কাছে দু-একবার ফোন কেনার আবদার করেও ব্যর্থ হয়েছে। মায়ের কাছ থেকে ফোন কেনার টাকা হাতাতে শেষে ফন্দি আঁটে অপহরণ নাটকের। প্রথমে বাড়ি থেকে পালিয়ে বগুড়ার বাঘোপাড়া আসে। সেখানে একটি চায়ের দোকানে রাত কাটায় সে। পরদিন মায়ের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। এরপর পুলিশের পাতা ফাঁদে পড়ে ‘মুক্তিপণ’-এর টাকা নিতে বিকাশের দোকানে গিয়ে ধরা পড়ে সে।