Thank you for trying Sticky AMP!!

সড়ক আইন সংশোধন দাবিতে কিশোরগঞ্জে বাস চলাচল বন্ধ

কিশোরগঞ্জের গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে কাউন্টার বন্ধ করে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। ছবি: তাফসিলুল আজিজ

বেলা পৌনে দুইটা। কিশোরগঞ্জ শহরের গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে বাস কাউন্টারের পাশে শিশু নাতনিকে কোলে নিয়ে ব্যাগ হাতে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন ঝরনা বেগম। হঠাৎ বাস ধর্মঘটের কারণে অন্যদের মতো তিনিও পড়েছেন বিপাকে। কাছে যেতেই বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। মেয়ে ঢাকার আবদুল্লাহপুর এলাকায় গার্মেন্টে কাজ করে। ছোট্ট নাতনি রৌজা মণি আমার সঙ্গেই কিশোরগঞ্জে থাকে। আজ তাঁর (রৌজা) মায়ের সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। সে জন্য মেয়েকে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে এখন কি বিপাকে পড়লাম। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস বন্ধ। এখন কেমনে ঢাকা যাই।’

আরেক যাত্রী মানিক মিয়া। বস্তা মাথায় নিয়ে কাউন্টারের পাশে দাঁড়ানো ছিলেন। পার্শ্ববর্তী জেলার নান্দাইল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য এসেছিলেন। তাঁকেও অন্যদের মতো ফেরত যেতে হচ্ছে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘একদিকে সরকার আইন করবে অন্যদিকে বাস চালকেরা ধর্মঘট করবে আর ভোগান্তিতে পড়ব আমরা।’

পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ বাস ধর্মঘট ডাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো যাত্রী। ঝরনা বেগম ও মানিক মিয়ার মতো মতো শত শত যাত্রীকে আজ বৃহস্পতিবার বাসস্ট্যান্ড থেকে ফেরত আসতে হয়। বাস বন্ধ থাকায় চাপ পড়েছে ট্রেনগুলোতে। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রাজধানীসহ আশপাশের জেলায় যাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া নতুন সড়ক পরিবহন আইন সম্বন্ধে চালক ও সাধারণ মানুষদের সচেতন হতে গতকাল বুধবার দুপুরে গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে এক কর্মশালা করেন। সেখানে প্রায় ২০০ বাসচালক ও শ্রমিকদের আইনটি মেনে নিতে তিনি তাগিদ দেন। কিন্তু কর্মশালার পরেই বিকেল থেকেই বাস চালক ও শ্রমিকেরা আইনটি সংশোধনের দাবিতে কিশোরগঞ্জে সব রুটে বাস বন্ধ করে ধর্মঘট শুরু করে।

নতুন সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর শাস্তির বিধান রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘দণ্ডবিধির ৩০৪বি ধারায় যা-ই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’ একই সঙ্গে এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এ ছাড়া নতুন আইনে বেপরোয়া যানবাহন পরিচালনার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান তিন বছর। নতুন আইনের বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানার পরিমাণও বাড়বে। বর্তমান আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি নির্ধারিত আছে তিন বছর। এটি জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

দুপুরে গিয়ে দেখা যায় গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে কাউন্টার বন্ধ করে সারি সারি বাস দাঁড়িয়ে আছে। আর এখানে সেখানে বাস চালক ও শ্রমিকেরা জটলা করে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের ভাষ্য, তাঁরা গরিব মানুষ। ৫ লাখ টাকা জরিমানা করলে কোথা থেকে দেবে। ৫ বছরের জেল হলে তাঁদের পরিবার ভিক্ষা করে খাবে। আইনের সংশোধন না করলে তাঁরা বাস চালাবেন না বলে জানিয়েছেন।

বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক লেনিন রায়হান কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন। জেলা মটরযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কায়সার আহমেদ বলেন, বাস বন্ধের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা মূলত করেছেন চালকেরা। তাঁরা আইনের সংশোধন চান। তিনি বলেন, আইনে সংশোধন আনার একটি প্রক্রিয়া চলছে। ফলে চালকদের বলা হয়েছিল রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি, নতুন আইনে জরিমানা দিতে না পারলে যেন জামিনের ব্যবস্থা থাকে। শাস্তির মাত্রাও যেন কমানো হয়।

কায়সার আরও জানান, কিশোরগঞ্জে চালকসহ কার্ডধারী ২২শ’ পরিবহন শ্রমিক আছেন। আর কন্ডাক্টর আছেন এক হাজার। মালিকেরা তাঁদের কোনো নিয়োগপত্র দেন না, দৈনিক চুক্তিতে কাজ করতে হয়। তাদের কত রকমের আপদ বিপদ থাকে, অসুখ-বিসুখ হয়। নিয়োগপত্র থাকলে তাঁদের বেতনের নিশ্চয়তা থাকত। ফলে সড়ক আইন সংশোধনের দাবির পাশাপাশি বাস চালকদের এসব দাবিও রয়েছে। যে কারণে চালকেরা বাস বন্ধ করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, তিনি এ ব্যাপারে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে শ্রমিক নেতাদের সবার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে তাদের কাছে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।