Thank you for trying Sticky AMP!!

হাসিমুখে লাউ তুলতে এসে গোড়া কাটা গাছ দেখে কৃষকের কান্না

লাউগাছের কেটে দেওয়া গোড়া দেখাচ্ছেন কৃষক নূর ইসলাম। রোববার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বড়-সিমলা গ্রামের মাঠে

সকালবেলা খেত থেকে লাউ তুলছিলেন কৃষক নূর ইসলাম। এখনই বাজারে নেবেন বিক্রির জন্য। মুখে তাঁর তখনো হাসি। শতাধিক লাউ তুলেছেন, আরও গাছে ঝুলে আছে। এমন সময় গাছের নিচের অংশে চোখ যাওয়ামাত্র কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। গাছে লাউ ঝুলে থাকলেও গোড়া থেকে সব গাছ কেটে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার রাতে দুর্বৃত্তরা এক বিঘা জমিতে থাকা প্রায় ৪০০ লাউগাছ কেটে দিয়েছে। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বড়-সিমলা গ্রামের মাঠের। মাত্র এক দিন আগে একই উপজেলার আরেক কৃষক লিংকন বিশ্বাসের ১৭ শতক জমিতে থাকা শতাধিক লাউগাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। তিনি বর্গাচাষি, অন্যের জমি বর্গা নিয়ে লাউ চাষ করেছিলেন।

রোববার সরেজমিনে বড়-সিমলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক নূর ইসলামের খেতের লাউগাছগুলোর সবুজ পাতা হেলে পড়ছে। মালিক নূর ইসলাম ও তাঁর বোন সোনাভান বিবি কাটা গাছগুলো দেখছেন আর কান্নাকাটি করছেন।

লাউগাছের কেটে দেওয়া গোড়া দেখাচ্ছেন নূর ইসলামের বোন সোনাভান বিবি। রোববার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বড়-সিমলা গ্রামের মাঠে

নূর ইসলাম জানান, মাঠে তাঁর প্রায় ১০ বিঘা চাষযোগ্য জমি রয়েছে। যেখানে ধান চাষ করেন। তারপরও চাচা শাহজাহান আলীর একখণ্ড জমি রয়েছে, যা সবজি চাষের উপযোগী। এটা ভেবে তিনি বছর চুক্তিতে এক বিঘা জমি বর্গা নেন। সেখানে হাইব্রিড জাতের লাউয়ের চাষ করেন। তিনি জানান, আনুমানিক দুই মাস আগে জমিতে চারা রোপণ করেন। এরপর অনেক টাকা ব্যয় করে টাল দিয়েছেন। গাছগুলোও টালে উঠে লাউ ধরতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে লাউ তুলতে শুরু করেছিলেন। প্রথম দিন ১৫টি, তারপর এক দিন ৩৫টি লাউ তুলে বিক্রি করেন। রোববার আবারও খেতে যান এবং শতাধিক লাউ তুলেছেন। এরই মধ্যে দেখতে পান তাঁর সব গাছ কাটা।

নূর ইসলাম বলেন, কারও সঙ্গে তেমন কোনো শত্রুতা তাঁর নেই। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন, যে কারণে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এই কারণে তিনি বুঝতে পারছেন না কারা কেন তাঁর খেতের ফসলের এভাবে ক্ষতি করল। নূর ইসলাম জানান, এই চাষ করতে তাঁর প্রায় ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আশা ছিল লাউ বিক্রি করে দুই লক্ষাধিক টাকা পাবেন। এই গাছ কেটে ফেলায় তাঁর মারাত্মক আর্থিক ক্ষতি হলো। এ বিষয়ে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।

গ্রামের বাসিন্দা নূর আলী জানান, ফসল ফলাতে একজন কৃষক কতটা পরিশ্রম করেন, তা তাঁরাই বুঝতে পারেন। সেই ফসল এভাবে কেটে দিলে কৃষকের মন ভেঙে যায়, তাঁরা ফসল উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। যে কারণে সবার উচিত সম্মিলিতভাবে এই ফসল ক্ষতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানো।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির চৌধুরী তাঁকে অবহিত করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি আরও বলেন, ফসলের খেত রক্ষায় সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি মাঠ পাহারার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।