Thank you for trying Sticky AMP!!

১০ বছর পর লাভের মুখ দেখলেন মুন্সিগঞ্জের আলুচাষিরা

মুন্সিগঞ্জ আলু চাষের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, ভোলা, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা আলু কিনে নিয়ে যান।

মুন্সিগঞ্জের আলু রাখার হিমাগারগুলোতে আলু বাছাই, বস্তাবোঝাই করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত মঙ্গলবার জেলার টঙ্গিবাড়ীর কম্বাইন্ড কোল্ড স্টোরেজে

মুন্সিগঞ্জে এবার মৌসুমের শুরু থেকে আলুর বাজার মোটামুটি ভালো ছিল। মাসখানেক ধরে আলুর দাম আরও বেড়েছে। তাই এখন হিমাগার থেকে আলু বের করে বিক্রির ধুম পড়েছে। এতে প্রায় ১০ বছর পর আলু চাষে লাভের মুখ দেখছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
মুন্সিগঞ্জ আলু চাষের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে ফরিদপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ভোলা, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে বিক্রির জন্য আলু কিনে নিয়ে যান। এখানকার চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১০ বছর ধরে তাঁরা আলু চাষ করে লাভ করতে পারেননি। গত কয়েক বছর পুঁজিও ফেরত পাননি। তবে এবার আলু বিক্রি করে তাঁরা খুশি।
জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জে ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, এস্টারিকসসহ ১০ জাতের আলুর চাষ হয়। ২০১৭ সালে এখানে ৩৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়। ২০১৮ সালে চাষ হয় ৩৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। গত বছর ৩৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করেন চাষিরা। এ বছর চাষ হয়েছে ৩৭ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে, যা গত তিন বছরের তুলনায় কম। এ বছর জেলাটিতে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১৩ লাখ ২ হাজার ২৭ মেট্রিক টন। তবে উৎপাদন কম হলেও এবার দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আলুর চাষ কম হয়েছে। বন্যায় অন্যান্য সবজির অনেক ক্ষতি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আলুর ওপর। তাই দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার মুন্সিগঞ্জ বড়বাজার, মুন্সিরহাট, মুক্তারপুর, রিকাবীবাজার, বৌবাজার, দয়ালবাজার, সিরাজদিখান, টঙ্গিবাড়ী বাজারসহ ১০-১২টি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, এস্টারিকস উচ্চফলনশীল জাতের আলু খুচরা বাজারে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ঈদের পর কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু বের হতে শুরু করেছে। গত বছর যে আলু প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই বস্তা ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকের লাভ থাকছে।
মো. শাহীন, কদম রসূল স্টোরেজের হিসাবরক্ষক

ব্যবসায়ীরা জানান, এবার ৩৫ টাকা দরে ৫০ কেজির বস্তা ১ হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময়ে বস্তা সাত থেকে সাড়ে আট শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বাজারে আলুর দাম বাড়ায় কৃষকেরাও লাভ পাচ্ছেন। হিমাগার থেকে আলু বের করে এনে বাজারে তুলছেন তাঁরা।
সদর উপজেলার নয়াপাড়া এলাকার চাষি রওশরাজ সরকার। তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে আলু চাষ করছেন তিনি। শুরুর দিকে আলুতে লাভ হলেও ১০ বছর ধরে ধারাবাহিক লোকসান গুনছেন। এবার ছয় শ টাকা দরে কিনে ২ হাজার বস্তা ও জমির ৩ হাজার বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছেন। হিমাগারে বস্তাপ্রতি খরচ ১৮০ টাকা। তবে সব খরচ বাদে এবার বস্তাপ্রতি ছয় শ টাকার ওপর লাভ হচ্ছে।
যুগনীঘাট এলাকার সাইফুল ইসলাম বললেন, ‘গেল কয়েক বছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান গুনছি। এবার ৫ একর জমির আলু বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ করছি।’
টঙ্গিবাড়ীর আলু ব্যবসায়ী ফারুখ খান বলেন, মৌসুমের শুরুতে ৭০০ টাকা দরে ১০ হাজার বস্তা আলু কিনেছিলেন। পুরোটাই হিমাগারে রাখেন। দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ১৫ দিন আলু বিক্রি করেছেন। খরচ ও হিমাগারের ভাড়া বাদ দিলেও তাঁর প্রতি বস্তায় সাড়ে পাঁচ শ টাকা লাভ থাকছে।

সদর উপজেলার কয়েকটি হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা পচা আলু বাছাই করে ভালো আলু বস্তায় ভর্তি করছেন। কেউ বস্তা ওজন করছেন। কেউ আলুর বস্তা ভর্তি করে ট্রাক, ট্রলারসহ যানবাহনে তুলে দিচ্ছেন।
দেওয়ান কোল্ডস্টোরেজের মালিক আরশ দেওয়ান বলেন, গত ১০ বছর আলু চাষ করে কৃষকেরা লাভের মুখ দেখেননি। অনেকবার তো কোল্ডস্টোরেজে আলু ফেলেই কৃষকেরা চলে গেছেন। অনেক কৃষক আলু ছেড়ে অন্য ফসল চাষ করছেন। তবে এবার আলুর চাষ কম হয়েছে। বন্যা ও কয়েকবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্য সবজি নষ্ট হয়েছে। তাই বাজারে আলুর চাহিদা বেশি। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে আলুর দাম মোটামুটি ছিল। তবে এখন বাজার বেশ চড়া। তাই স্টোরেজের ক্রেতা-বিক্রেতারা সরব হয়ে উঠেছেন।

গেল কয়েক বছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান গুনছি। এবার ৫ একর জমির আলু বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ করছি।
যুগনীঘাট এলাকার সাইফুল ইসলাম

কদম রসূল স্টোরেজের হিসাবরক্ষক মো. শাহীন বলেন, কোরবানির ঈদের পর কোল্ডস্টোরেজ থেকে আলু বের হতে শুরু করেছে। গত বছর যে আলু প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার সেই বস্তা ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে হিমাগারের ভাড়া দেওয়ার পরও কৃষকের মোটা অঙ্কের লাভ থাকছে।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম বলেন, মুন্সিগঞ্জের মাটি ও আবহাওয়া আলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। সরকার আলুভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে এবং বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে দেশ আরও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করবে।