Thank you for trying Sticky AMP!!

৩৩৩ নম্বরে কল করে নাটোরে এক দিনে ৭০ জন পেলেন খাদ্যসহায়তা

নাটোরে ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়ে একদিনে ৭০ জন খাদ্যসহায়তা পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে

‘ছেলেমেয়েরা বারবার খাওয়ার জন্য বায়না ধরছিল। কিন্তু ঘরে খাবার ছিল না। অসুস্থ স্বামী শয্যাশায়ী। ধারদেনা পরিশোধের সামর্থ্য ছিল না। তাই কারও কাছে ধার চাওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ ছোট ছেলে শান্ত বলল, “মা ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাবার চাও। সরকার খাবার দিবিনি।” ছেলের কথামতো ফোন দিছিলাম। সব শুনে খাবার দিতে রাজি হলো। কিন্তু পাওয়া যাবে দুদিন পর। তবুও ভরসা পালাম। পাশের বাড়ি থেকে তিন কেজি চাল নিলাম দুদিন পর পরিশোধ করার শর্তে। আপাতত ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে বাঁচা গেল। আজ ইউএনও অফিস থ্যাকি সেই খাবার পানু। ধার শোধ করে হয়তো আরও কয়েক দিন ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে বাঁচা যাবি।’

কথাগুলো বলছিলেন নাটোর সদর উপজেলার রথবাড়ি গ্রামের বিউটি বেগম। তাঁর মতো ৭০ দুস্থ মা আজ বৃহস্পতিবার ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সরকারি খাদ্যসহায়তা পেয়েছেন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম আজ সকালে তাঁদের হাতে খাবারের বস্তা তুলে দেন।

খাদ্যসহায়তা পাওয়া আরেক নারী সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, তাঁর এক মেয়ে স্নাতকে ও এক ছেলে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ে। স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে বাড়িতে পড়ে আছেন। তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। নাটোর শহরে লকডাউন শুরু হওয়ায় গতকাল বুধবার থেকে কাজে যেতে পারছেন না। লজ্জায় কারও কাছে হাত পাততেও পারছেন না। ছেলেমেয়েদের পরামর্শে তিনি ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়ে খাদ্যসহায়তা চেয়েছিলেন। ফোনে তাঁর পরিবার সম্পর্কে তথ্য নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে চাল, ডাল, তেলসহ খাদ্য উপকরণ দিয়েছে প্রশাসন। এতে তাঁর পরিবার অন্তত সাত দিন চলতে পারবে। ফোন করে খুব সহজে খাদ্যসহায়তা পেয়ে তিনি আনন্দিত। তবে সাত দিন পর লকডাউন আবার বাড়লে কী করবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্নতা থেকে যাচ্ছে তাঁর।

নাটোরে ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়ে একদিনে ৭০ জন খাদ্যসহায়তা পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে

পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে খাদ্যসহায়তা পাওয়া অন্তত পাঁচ ব্যক্তি প্রথম আলোকে জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে সহায়তা চাইলে তাঁরা নানা অছিলায় ফিরিয়ে দেন। আবার যাতায়াত খরচ হাতে না থাকায় উপজেলায় বা জেলা প্রশাসকের কাছেও যেতে পারেন না। বাড়িতে বসে শুধু ফোন করে এভাবে খাদ্যসহায়তা পেয়ে তাঁরা অভিভূত হয়েছেন।

নাটোর সদরের ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্যসহায়তা পাওয়ার বিষয়টি এখনো অনেকের অজানা। অতিদরিদ্ররা সাহায্য-সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন স্থানে দৌড়াদৌড়ি করতে পারেন। কিন্তু অনেক অসচ্ছল ব্যক্তি মানসম্মানের কথা চিন্তা করে সব সময় অন্যের কাছে হাত পাততে পারেন না। তাঁরাই মূলত ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চান। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাৎক্ষণিক তাঁদের সম্পর্কে তথ্য যাচাই করে খাদ্যসহায়তা তুলে দেন তাঁরা। এ রকম ফোন পেয়ে আজ এক দিনেই ৭০ জনকে সহায়তা দেওয়া হলো। এ ব্যাপারে আরও প্রচারণা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।