Thank you for trying Sticky AMP!!

৩৫ বছরের বাঁকা পা সোজা হলো তাঁর

পরিবারের সঙ্গে স্বপন গাজী

১০ বছর বয়সে সড়ক দুর্ঘটনায় পা বাঁকা হয়ে যায় স্বপন গাজীর। বাঁকা পা নিয়ে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছিল তাঁর জীবন। দারিদ্র্য আর সাংসারিক টানাপোড়েনে ঠিকমতো পায়ের চিকিৎসাও করাতে পারেননি। এভাবেই প্রায় পঙ্গুর মতো কেটে গেছে সাড়ে তিন দশক। এবার বিনা মূল্যে চিকিৎসায় ৩৫ বছরের বাঁকা পা সোজা হয়েছে স্বপন গাজীর। ফিরে পেয়েছেন স্বাভাবিক জীবন। এর পেছনে কাজ করেছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিকস সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দল।

রিকশাচালক স্বপন গাজীর বর্তমান বয়স ৪৫ বছর। চাঁদপুর সদর উপজেলার খুলিশাডুলি এলাকার মৃত ফজলুর রহমান গাজীর ছেলে তিনি। স্বপন গাজী ও তাঁর পরিবারে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৫ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ডান হাঁটু ও পায়ের পেছনের অংশ পুড়ে যায়। এতে তাঁর ডান পা প্রায় অক্ষম হয়ে পড়ে। প্যাডেলচালিত রিকশাও আর চালাতে পাচ্ছিলেন না। সর্বশেষ তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। তবে তাঁর পায়ের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। তিনি শরণাপন্ন হন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের। সেখানকার অর্থোপেডিকস সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দল তাঁর আর্থিক অবস্থার কথা জানতে পেরে বিনা মূল্যে চিকিৎসার আশ্বাস দেয়। ৮ অক্টোবর ওই হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়।

চিকিৎসকদের সঙ্গে স্বপন গাজী (বাঁ থাকে দ্বিতীয়)

অর্থোপেডিকস বিভাগের চিকিৎসক আনিসুর রহমান সূফী বলেন, মেডিকেলের ভাষায় স্বপন গাজী পোস্ট বার্ন কন্ট্রাকচার বা আগুনে পুড়ে শরীরের কোনো অংশ কুঁচকে যাওয়া রোগে ভুগছিলেন। তাঁর ডান হাঁটু বরাবর বাঁকা হয়ে কুঁচকে যায়। সেই বাঁকা পা নিয়ে তিনি ৩৫ বছর ধরে প্রতিবন্ধী জীবনের ঘানি টেনে যাচ্ছিলেন। সম্প্রতি তাঁর সেই কুঁচকানো অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয়। ‘মারজলিন আলসার’ যা ক্যানসারের দিকে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় তিনি এবং হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. শাহাদাত হোসেন ও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার ফরিদ আহমেদ চৌধুরী একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন।

‘প্রথম ধাপে আমরা সমস্ত পোড়া অংশ অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করি, যা যথেষ্ট জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল। পরে বাঁকা পা সোজা করে আক্রান্ত স্থানের মাংস পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। কারণ তাঁর কোনো ক্যানসারের অস্তিত্ব আছে কি না, সেটা জানার জন্য। পরে ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসে ক্যানসারের কোনো অস্তিত্ব নেই। আমরা রোগীকে নিয়মিত ফলোআপ করি এবং দ্বিতীয় দফা অপারেশনের উপযুক্ত হলে তাঁর স্কিন গ্রাফট করি। এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ ও স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন।’ এসব কথা বলেন চিকিৎসক আনিসুর রহমান।

স্বপন গাজীর স্ত্রী তাছলিমা আক্তার বলেন, ‘ডাক্তারদের চিকিৎসায় আমার স্বামী এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছেন। এতে আমরা অনেক খুশি। এ জন্য এখানকার ডাক্তারদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’

হাসপাতালটির অর্থোপেডিকস বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট শাহাদাত হোসেন বলেন, স্বপন এখন নিজের দুই পা দিয়ে স্বাভাবিক হাঁটাচলা শুরু করছেন। তাঁর পায়ের এই জটিল রোগ চাঁদপুরের বাইরে চিকিৎসা করলে ব্যয় হতো প্রায় ৩ লাখ টাকা। কিন্তু তাঁর চিকিৎসা বিনা মূল্যে করা হয়েছে। এখন স্বপনের হাসিমুখ দেখে তাঁরাও আনন্দিত। এ যেন এক যুদ্ধ জয়ের আনন্দ।