Thank you for trying Sticky AMP!!

৪৯ বছর পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরের খোঁজ পেল পরিবার

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের কবরের স্মৃতিফলক

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪৯ বছর পর শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের কবরের খোঁজ পেয়েছে তাঁর পরিবার। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের চানপুর-হাশিমপুর দরিয়ার পীরের মোকামে তাঁর কবর।

আনোয়ার হোসেন কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার প্রেমারচর গ্রামের মৃত আবদুল মজিদের ছেলে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন সাত ভাই-বোনের মধ্যে বড় ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ও তাঁর ছোট ভাই এ কে এম সামছুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ভারতের লোহারবন্দে প্রশিক্ষণ শেষে সামছুদ্দিন এলাকায় যুদ্ধে অংশ নেন। আর আনোয়ার হোসেন কুকিরথল ক্যাম্পে সাব-সেক্টর কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবদুল কাদিরের অধীনে বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করেন।

১৯৭১ সালের ৩ অক্টোবর প্লাটুন কমান্ডার তজমুল আলীর নেতৃত্বে আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা দেশে ঢুকে বড়লেখা থানার হরিপুর-বড়খলা গ্রামের ‘বড়বন্দ’ হয়ে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি ক্যাম্প দখল করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বড়লেখা থানার বাজনি ছড়া রেললাইনের কাছে পৌঁছামাত্র সশস্ত্র রাজাকার বাহিনী তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি করে। এতে তাঁদের দলটি ছত্রভঙ্গ হলে তিনি পেছনে পড়ে যান। পরে পথ হারিয়ে ফেলেন তিনি। তখন তিনি একাই ফেঞ্চুগঞ্জ থানার উদ্দেশে রওনা দিয়ে গাংকুল হয়ে চানপুর এলাকায় পৌঁছান। ৪ অক্টোবর ভোরে চানপুর এলাকায় একা পেয়ে রাজাকাররা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে দরিয়ার পীরের মোকামে দাফন করেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলে সামছুদ্দিন বাড়ি ফিরে আসেন। কিছুদিন পর এক পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন আনোয়ার হোসেন বড়লেখায় যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু কোন স্থানে শহীদ হয়েছেন, তা জানতে পারেননি।

সম্প্রতি সামছুদ্দিনের মেয়ে এনজিও কর্মী রেহানা আক্তার অফিসের কাজে মৌলভীবাজারে আসেন। এরপর তিনি তাঁর চাচা শহীদ আনোয়ার হোসেনের কবরের খোঁজে বড়লেখায় যান। পরে তিনি বড়লেখা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনসহ স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাচার কবরের খোঁজ পান। বিষয়টি তিনি তাঁর বাবাকে জানান। এরপর স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় সামছুদ্দিন ভাইয়ের কবরে স্থাপন করেন নামফলক।

গত শুক্রবার বিকেলে এ নামফলক উন্মোচন করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বড়লেখা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন, সামছুদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান এ জে লাভলু প্রমুখ।

সামছুদ্দিন জানান, যাঁরা তাঁর ভাইয়ের লাশ দাফন করেছিলেন, তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলেছেন। এরপর নিশ্চিত হয়ে ভাইয়ের স্মৃতি রক্ষায় এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নামফলক নির্মাণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। আশা ছিল ভাইয়ের কবর খুঁজে পাওয়ার। সেটাও পেয়ে গেছি। আমি ভীষণ খুশি। আমার আর চাওয়ার কিছুই নেই।’

বড়লেখা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন গতকাল শনিবার বলেন, ৪৯ বছর পর হলেও স্বজনেরা কবর খুঁজে পেয়ে আনন্দিত।