Thank you for trying Sticky AMP!!

জলাবদ্ধতায় বাড়ির উঠানে পানি। গত রোববার সকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের চানপুরে

৫০০ একরের ফসলের ক্ষতি

মাঠঘাট পানিতে থই থই করে। গ্রামীণ রাস্তা ডুবে যায়। অনেক বাড়ির উঠানে পানি ওঠে। বর্ষাকালজুড়েই এই পরিস্থিতি।

একটি নদীর বেশির ভাগ অংশই খনন করা হয়েছে। কিন্তু শেষ দিকটা ভরাট। পানি বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। অন্য কোনো দিকেও পানি যেতে পারছে না। বৃষ্টি হলেই নদীর পানি ফুলেফেঁপে দুই পাড় উপচে আমন ফসল তলিয়ে যায়। মাঠঘাট পানিতে থই থই করে। গ্রামীণ রাস্তা ডুবে যায়। অনেক বাড়ির উঠানে পানি ওঠে। বর্ষাকালজুড়েই এই পরিস্থিতি।

তিন বছর ধরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের আটটি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এই জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রতিবছর প্রায় ৫০০ একর জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। শাখা বরাক নামে একটি নদের শেষ প্রান্ত ভরাট থাকায় এই জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

গত রোববার সদর উপজেলার চানপুর গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ফসলের মাঠজুড়ে বৃষ্টির পানি ঢেউ খেলছে। কিছুদিন আগেও এই মাঠে বোনা আমনের সবুজ চারা বাতাসে দোল খেয়েছে। এখন পানির নিচে। পাঁচ-ছয় দিন ধরে জলাবদ্ধতা শুরু হয়েছে। ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে বাড়ির উঠানে। কারও ঘরের ভিটায়। বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ডুবে আছে। চানপুর গ্রামের কবরস্থানটি কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে। লোকজন পানি ভেঙে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন। অনেকে বাড়ি থেকে নৌকায় পাকা সড়কে উঠছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাখা বরাক কুশিয়ারা নদীর একটি শাখা হিসেবে খলিলপুর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ২০১৯ সালে পাউবো শাখা বরাকের প্রায় আট কিলোমিটার খনন করেছিল। কিন্তু ভাটি অংশ আর খনন করা হয়নি। ভাটিতে বাকিটুকু পড়েছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায়। এতে বৃষ্টির পানিনিষ্কাশন হতে পারে না। পুরো এলাকায় তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।

চৈত্র-বৈশাখ মাসে বৃষ্টি হলে খলিলপুর ইউনিয়নের ফতেপুর, আলাপুর, বাঘারাই, চানপুর, মুকিমপুর, চিশনপুর, খঞ্চনপুর, কাটারাইসহ আশপাশের গ্রামের মাঠ তলিয়ে যায়। এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়েন। এলাকার চানপুর, খঞ্চনপুর ও মুকিমপুরের মাঠে এই আট গ্রামের মানুষের ফসলের খেত। জলাবদ্ধতায় অন্তত ৫০০ একর জমির ফসল হচ্ছে না। প্রতিবছরই বৃষ্টি শুরু হলে আমনের বীজ বোনেন কৃষকেরা। পানি এসে তা তলিয়ে যায়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে পানি নামে। তত দিনে ফসল বোনার সময় ফুরিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে বেশ কটি বিকল্প ব্যবস্থার কথা জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, যদি শাখা বরাকের নবীগঞ্জ অংশ খনন করা সম্ভব না হয়, তাহলে সরকারবাজার-গোপলারবাজার সড়কের ফোটারচর-ঝিটকা এলাকায় একটি সেতু এবং ওই সেতুর ভাটির দিকটি খনন করে দেওয়া হলে পানি বিজনা নদী দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে। সরকারবাজার এলাকায় কামারকালিতে একটি জলকপাট আছে, সেটি খুলে দিলে ওদিকে পানি বেরিয়ে বড় হাওর দিয়ে বিজনা নদীতে গিয়ে পড়তে পারে। সাধুহাটি এলাকার পূর্ব লামুয়া এলাকার কিরাউনার বানের (বাঁধ) মেস্তর বাড়ির খাল খনন করে দিলেও জলাবদ্ধতার নিরসন হতে পারে। এ ছাড়া গুদির খাল, বড় খাল, বাঘাইর খালসহ এলাকার যতটি খাল ভরাট হয়ে গেছে, এগুলো খনন করলে জলাবদ্ধতা থাকবে না।

খলিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে থেকেই মানুষ জলাবদ্ধতা নিয়ে মিছিল, মিটিং করছেন।’

পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শাখা বরাকের জেলার অংশ খনন করা হয়েছে। বাকিটুকু পড়েছে হবিগঞ্জে। হবিগঞ্জ অংশ খনন করলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না।’