Thank you for trying Sticky AMP!!

৫০ হাজার টাকায় শিশু বিক্রি, মায়ের মামলায় নানা-নানিসহ গ্রেপ্তার ৬

প্রতীকী ছবি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ৫০ হাজার টাকায় এক ছেলেশিশুকে বিক্রির অভিযোগে শিশুর নানা-নানি, দুই দালালসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সময় ২ বছর ৯ মাস বয়সী শিশুটিকেও উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম নাজিমুল ইসলাম ওরফে তামিম।

শিশুটির মায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত বেগমগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী সেনবাগ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। এ ঘটনায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠান।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন শিশুটির নানা লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার দক্ষিণ টুমচর গ্রামের আলা উদ্দিন (৪৫) ও নানি নিলুফা বেগম (৪০), শিশুটিকে দত্তক নেওয়া সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের উত্তর শাহাপুর গ্রামের আবু তালেব (৩৮) ও তাঁর স্ত্রী সালমা আক্তার (২৫) এবং শিশু বিক্রিতে সহায়তাকারী আবুল খায়ের (৬৫) ও জামাল উদ্দিন (৩৮)।

পুলিশ ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মামলার বাদী শিশুটির মা রোমানা আক্তার (২২) একজন কর্মজীবী নারী। ২০১৭ সালে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়। এরপর তাঁর গর্ভে নাজিমুল ইসলামের জন্ম হয়। তার বয়স বর্তমানে ২ বছর ৯ মাস। ২০২০ সালে প্রথম স্বামীর সঙ্গে রোমানার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি তাঁর শিশুপুত্রকে বেগমগঞ্জের মীরওয়ারিশপুর এলাকার ভাড়া বাসায় তাঁর বাবা আলাউদ্দিন ও মা নিলুপা বেগমের কাছে রেখে পুনরায় বিয়ে করে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে তাঁর ফেনীর বাসায় চলে যান।

রোমানা দ্বিতীয় স্বামীর কাছে চলে যাওয়ার পর তাঁর মা–বাবা নাতির ভরণপোষণে অক্ষমতা প্রকাশ করে শিশুটিকে আবু তালেব ও সালমা বেগম দম্পতির কাছে দত্তক দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু রোমানা ছেলেকে দত্তক দিতে অস্বীকার করেন।

গত ১০ অক্টোবর রোমানার মা–বাবা তাঁর কাছ থেকে কৌশলে ৩টি ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে নেন। পরদিন ১১ অক্টোবর রোমানা মা–বাবার কাছে গিয়ে ছেলেকে নিজের কাছে (দ্বিতীয় স্বামীর বাসায়) নিয়ে যেতে গেলে আশপাশের লোকজন সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে তাঁকে নানা অপবাদ দেন। এ সময় তিনি মা–বাবাকে তাঁর ছেলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা তাঁদের নাতি নাজিমুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন।

এরপর মা–বাবার কাছ থেকে নানাভাবে ছেলের খোঁজ জানার চেষ্টা করেন রোমানা। কিন্তু তাঁরা কিছুতেই এ বিষয়ে মেয়েকে সহযোগিতা করতে রাজি হননি। পরে শনিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জ থানায় এসে ঘটনাটি অবহিত করেন রোমানা। এরপর রাতেই থানা-পুলিশ প্রথমে মীরওয়ারিশপুর এলাকা থেকে রোমানার বাবা আলাউদ্দিন ও মা নিলুপা বেগমকে গ্রেপ্তার করে।

পরবর্তীকালে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার ভোর রাতে সেনবাগ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে আবু তালেব ও সালমা বেগমকে এবং সন্তান বিক্রির ঘটনায় সহযোগী আবুল খায়ের ও জামাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময় আবু তালেব ও সালমা দম্পতির কাছ থেকে শিশু নাজিমুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, রোমানা আক্তার নামের ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে শিশু বিক্রির অভিযোগে তাঁর মা–বাবাসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রোববার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।