Thank you for trying Sticky AMP!!

৯৩ শিক্ষার্থীর কী হবে?

তাঁরা সবাই ডিগ্রি পাস কোর্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। এসেছিলেন প্রথম পর্বের পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে। কিন্তু ক্লাসে হাজিরা ৪৫ শতাংশ না থাকায় তাঁদের ফরম পূরণ করতে দেয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এই শিক্ষার্থীদের দাবি, ইচ্ছা থাকলেও কলেজে ৪৫ শতাংশ উপস্থিতি ধরে রাখতে পারেননি তাঁরা। তাঁরা কেউ শ্রমজীবী, কেউ গৃহবধূ। সবাইকে টানতে হয় সংসারের ঘানি। এরপরও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার অদম্য স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু হাজিরার কারণে পরীক্ষায় বসতে না পারলে এখন শিক্ষাজীবন নষ্ট হয়ে সে স্বপ্ন ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা তাঁদের।

ঘটনাটি যশোরের কেশবপুর সরকারি কলেজের। ক্লাসে উপস্থিতি কম থাকায় এই কলেজের ডিগ্রি পাস কোর্সের প্রথম পর্বের পরীক্ষায় বসতে পারছেন না ৯৩ জন শ্রমজীবী শিক্ষার্থী। চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলে অনেকের শিক্ষাজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে।

হাজিরা মাফ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে তাঁরা গিয়েছিলেন কলেজ অধ্যক্ষের কাছে অনুরোধ জানাতে। এ সময় কর্তৃপক্ষ তাঁদের অনুরোধ তো শোনেইনি, উল্টো পুলিশ ডেকে এক শিক্ষার্থীকে আটক করে থানায় পাঠিয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রি পাস কোর্সে ১২৩ শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে অধ্যয়ন করছেন। কলেজের একাডেমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪৫ শতাংশ ক্লাস না করলে কোনো শিক্ষার্থী জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল মঙ্গলবার ছিল প্রথম বর্ষের পাস কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের শেষ তারিখ। এদিন ৪৫ শতাংশ হাজিরার শর্ত পূরণ করায় মাত্র ৩০ শিক্ষার্থীকে ফরম পূরণ করার সুযোগ দেওয়া হয়। বাকি ৯৩ জন শিক্ষার্থী হাজিরার শর্ত পূরণ না করায় ফরম পূরণ করতে পারেননি।

ফরম পূরণ করতে না পারা কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, মাত্র এক মাস আগে কলেজ কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে হাজিরার বিষয়টি প্রথম জানিয়েছে। তার আগে তাঁরা হাজিরার বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেননি। 

তাঁরা জানান, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে এক সপ্তাহ ধরে কলেজের অধ্যক্ষ ও কলেজের প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ধরনা দিয়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে হাজিরার বিষয়টি মাফ করে ফরম পূরণের অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ফল না পেয়ে গতকাল ফরম পূরণের শেষ তারিখে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এনায়েত হোসেনের কাছে ফরম পূরণবঞ্চিত ৯৩ জন শিক্ষার্থী ছাড়াও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা শেষবার অনুরোধ নিয়ে যান। কিন্তু কারও অনুরোধ রাখা হয়নি।

এরপর পরীক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ইউএনও পুলিশ দিয়ে তাঁদের কলেজ থেকে বের করে দেন। এ সময় আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী টিপু সুলতানকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ফরম পূরণে অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থী সাগর দাস বলেন, নিয়মিত ক্লাসে আসার ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। কারণ, তিনি ভ্যান চালিয়ে লেখাপড়া করেন, আবার সংসারও চালান। আরেক শিক্ষার্থী তুহিন হোসেন বলেন, তিনি ডিশ লাইনের লাইনম্যানের কাজ করে সংসারে টাকা জোগান, আবার লেখাপড়া করেন। তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে ক্লাস করব?’ হাদিউজ্জামান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রতিদিন মাঠে না খাটলে সংসার চলে না। ক্লাস করব কীভাবে?’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাঁরা নিয়মিত ক্লাসে আসেন না, তাঁদের মধ্যে একটি বড় অংশ শ্রমজীবী, কেউ গৃহবধূ। তাঁরা জানান, এ বছর পরীক্ষা দিতে না পরলে তাঁদের জীবন থেকে এক বছর নষ্ট হয়ে যাবে। তাঁরা ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁদের ফাইনাল পরীক্ষা ২০২১ সালে হবে। এক বছর লস গেলে ফাইনাল পরীক্ষা আসতে আসতে রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ থাকবে না। তখন আর তাঁরা ডিগ্রি নিতে পারবেন না।

এসব সাধারণ শিক্ষার্থীর আকুল আবেদন, হাজিরার বিষয়টি ক্ষমা করে তাঁদের ফরম পূরণ করার সুযোগ দেওয়া হোক।

এ ব্যাপারে কেশবপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এনায়েত হোসেন বলেন, কলেজের একাডেমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারছেন না। এখানে তিনি নিরুপায়। তাঁর করার কিছুই নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেশবপুর সরকারি কলেজের প্রশাসক ও ইউএনও মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা শূন্য শতাংশ অনুপস্থিত, তাঁরা কেন পরীক্ষা দেবেন? কোনো ক্লাস না করে কীভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবেন? তাঁদের পরীক্ষা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’