Thank you for trying Sticky AMP!!

৯৯৯ নম্বরে ফোন দেওয়ায় বেঁচে গেলেন বৃদ্ধা

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সৌলা গ্রামের শতবর্ষী হালিমা খাতুনকে রোববার আর্থিক সহায়তা দেন ঘোড়াঘাটের ইউএনও এবং থানার ওসি

মায়ের বয়স শত বছর হয়ে গেছে। সব সময় নানা অসুখ–বিসুখ লেগেই থাকে। স্ত্রীও অসুস্থ। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। এ পরিস্থিতিতে অসুস্থ মাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে এসেছিলেন ভ্যানচালক ছেলে। অসহায় বৃদ্ধাকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে মানুষের মায়া হয়। তাঁকে সহায়তা করার জন্য জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হয়। পুলিশের একজন কর্মকর্তা এসে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে দেওয়া হয় চিকিৎসা।

এখন ওই বৃদ্ধা ছেলের বাড়িতেই থাকবেন। তবে তাঁর খাওয়া ও চিকিৎসায় আর কোনো সমস্যা হবে না। স্থানীয় সাংসদ শিবলী সাদিক বৃদ্ধা যত দিন বেঁচে থাকবেন, তত দিন তাঁকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ঘটনা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার দামোদরপুর সৌলা গ্রামের।

ওই বৃদ্ধা হলেন সৌলা গ্রামের রজ্জব আলীর স্ত্রী হালিমা খাতুন (১০০)। হালিমা খাতুন রজ্জব আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রজ্জবের প্রথম স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়েকে রেখে মারা যান। পরে হালিমাকে বিয়ে করেন তিনি। প্রায় ২৩ বছর আগে রজ্জব আলী মারা যান। হালিমার কোনো সন্তান ছিল না। বিয়ের পর থেকে সতিনের ছেলেমেয়েদের আগলে রেখেছেন। নিজের সন্তানের মতো লালনপালন করে বড় করেছেন। এমনকি নিজের নামে থাকা ভিটেমাটিসহ ১০ শতক জমিও ছেলেমেয়েদের নামে লিখে দিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে হালিমা খাতুনকে শনিবার সন্ধ্যায় ভ্যানে করে মেয়ের বাড়িতে পাঠান। মেয়ের শ্বশুরের বাড়িতেও ঠাঁই হয়নি হালিমার। সেই ভ্যানে করেই ফেরত আসার সময় ভ্যানচালক ছেলে আতিয়ার রহমান বাড়ির কাছে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যান।

রাত সাড়ে ১১টার সময় এক পথচারী এ ঘটনা দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে জানান। রাতেই ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমউদ্দিন ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ সময় আতিয়ার রহমানকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাফিউল আলম বৃদ্ধাকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। পরে ছেলে আতিয়ার রহমানকে সতর্ক করে হালিমা খাতুনকে ছেলের হাতে তুলে দিয়েছেন। এ সময় তিনি তাঁকে দুই বস্তা শুকনো খাবার দেন এবং তাঁকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। ঘোড়াঘাট থানার তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে বৃদ্ধ হালিমাকে দেওয়া হয়েছে একটি হুইলচেয়ার। উপজেলার সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রতি মাসে ২০ কেজি করে চাল হালিমার জন্য বরাদ্দ করেছেন।

এ ঘটনা জানতে পেরে স্থানীয় সাংসদ শিবলী সাদিক তাঁর প্রতিনিধি মারফত তাঁকে নগদ টাকা দিয়েছেন। মুঠোফোনে শিবলী সাদিক বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে প্রতিনিধি পাঠিয়েছি। সরকারিভাবে বৃদ্ধ হালিমাকে শিগগিরই একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া যত দিন তিনি বেঁচে থাকবেন, তত দিন তাঁর চিকিৎসাসেবা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’