Thank you for trying Sticky AMP!!

'অতিরিক্ত মদ্যপানে' খুলনায় পাঁচজনের মৃত্যু

খুলনা

অতিরিক্ত মদপানে খুলনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এর মধ্যে খুলনা মহানগরের চারজন ও রূপসা উপজেলায় একজন রয়েছেন। বিজয়া দশমীর দিন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার মদপানের এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

গতকাল দুপুর থেকে আজ বুধবার সকালের মধ্যে সবার মৃত্যু হয়। এই তালিকায় দুই সহোদর ভাইও রয়েছেন। অন্যদের মধ্যে একজন গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ও একজন রূপসা কলেজের শিক্ষার্থী।

মারা যাওয়া পাঁচ ব্যক্তি হলেন, নগরের সোনাডাঙ্গা থানার গল্লামারী এলাকার তাপস দাস (৩৫) ও তাঁর ছোট ভাই প্রসেনজিৎ দাস (২৮), সদর থানার গ্লাক্সোর মোড় এলাকার সুজন শীল (২৫) ও সদর হাসপাতাল এলাকার রাহুল বিশ্বাস (২৫) এবং রূপসা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের পরিমল দাস (৩০)। এর মধ্যে পরিমল বাদে সব লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে রাহুল গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও সুজন শীল রূপসা কলেজের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন।

এ ছাড়া অমিত শীল (৪০) ও দীপ্ত নামে দুজন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অমিতকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। পুলিশ বলছে, মদপানে বিষক্রিয়ায় তাঁরা মারা গেছেন। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু তাঁরা বলতে পারবেন না।

তাপস ও প্রসেনজিতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাপস। এরপর তাঁকে খুলনার বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ৩টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। অন্যদিকে তাপস মারা যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রসেনজিৎ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। আজ সকাল সোয়া আটটার দিকে ওই হাসপাতালেই তিনি মারা যান। তাপসের প্রায় এক মাস বয়সী এক ছেলে ও প্রসেনজিতের প্রায় এক বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।

সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, দুজনই অতিরিক্ত মদ্যপান করায় শরীরে মাদকের বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। ওই ঘটনায় দুটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সুজন শীলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাঁকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ভোরের দিকে অবস্থা খারাপ হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনেন স্বজনেরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়।

রাহুল বিশ্বাসের স্বজনেরা জানান, আজ ভোর ৪টার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন রাহুল। ওই সময় তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে তিনি মারা যান।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম বাহার বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে সুজন ও রাহুল বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন। দুজনের ঘটনাতেই দুটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলেই প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। লাশ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, গতকাল দুপুরের দিকে মারা যান পরিমল দাস। ওই ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি, তাই কোনো মামলাও হয়নি। লাশ পরিবারের সদস্যরা সৎকার করেছেন।

আজ দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছিলেন খুলনা সিভিল সার্জন এএসএম আবদুর রাজ্জাক ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান।
ওই সময় সিভিল সার্জন সাংবাদিকদের বলেন, যারা মারা গেছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সবাই মদ্যপান করেছিলেন। অনেক সময় অতিরিক্ত মদ্যপান করার ফলে শরীরে বিষক্রিয়া হয়, এতে মানুষ মারা যায়। অতীতেও এমন বহু ঘটনা দেখা গেছে। মদগুলো সব ভারতীয় ছিল বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক রাশেদুজ্জামান বলেন, দেশে এখন মদ বিক্রির ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ কারণে অনেকে হয়তো অবৈধভাবে ভারত থেকে মদ এনেছেন। ওই মদের সঙ্গে অন্য কিছু মিশিয়ে খাওয়ার ফলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনাটি তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন।