Thank you for trying Sticky AMP!!

'আমরা শ্রমিক না মানুষ, বুঝতে পারি না'

দ্বিতীয় দফা ছুটি পেয়ে শ্রমিকেরা আবারও বাড়ি ফিরছেন। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় খোলা ট্রাকে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছেন তাঁরা। মাওনা চৌরাস্তা, শ্রীপুর, গাজীপুর, ৫ এপ্রিল। ছবি: সাদিক মৃধা

‘করোনাভাইরাসের কারণে ছুটি হইল। টাকা নাই। বাড়িত চইলা গেলাম। চাকরি বাঁচাবার জন্য শনিবার চইলা আসলাম। আইসা শুনি আবার ছুটি। আগে জানাইলে কি হইতো? আসলে আমরা শ্রমিক না মানুষ, বুঝতে পারি না।’

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার একটি পোশাক কারখানার অপারেটর মুজিবুর রহমান মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় এসব কথা আক্ষেপের সুরে বলেন। তিনি গতকাল শনিবার সারা দিন হেঁটে ও ভেঙে ভেঙে ছোট ছোট গাড়িতে করে শ্রীপুরে পৌঁছান। পরে আবারও ছুটি ঘোষণার পর আজ রোববার তাঁর স্ত্রী ও ৬ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

সৌভাগ্যক্রমে একটি খোলা ট্রাকে আরও অন্তত ৩০ জনের সঙ্গে জায়গা পেয়েছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার দ্বীন ইসলাম। তিনি শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মী। তাঁর কোলে সাত-আট মাস বয়সী এক শিশু। নিজের ট্রাভেল ব্যাগ থেকে একটি গেঞ্জি বের করে শিশুর মাথায় দিয়ে তীব্র রোদ নিবারণের চেষ্টা করছিলেন তিনি। প্রথম আলোর এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্টে আছি ভাই। ভাইরাসের ভয়ের ভেতরেও বাড়িতে যাইতে হইতেছে। গাড়ি বন্ধ রাইখা আমগরে এখানে আনার দরকার ছিল? আবার আমগর উপরে এমন বিপদ চাপাইয়া দেওয়া হইলো।’

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মুলাইদ এলাকায় পিকআপের ২৫ যাত্রীকে নামিয়ে দিয়েছে পুলিশের একটি টহল দল। পরে তাঁরা হেঁটে ময়মনসিংহ অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে শরিফুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ‘কীভাবে যাব কিচ্ছু জানি না। গাড়ি থেকে নামায়া দিয়েছে পুলিশ। এ এলাকায় থাকলে খামু কী? হাতে টাকা তো নাই।’

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে গাদাগাদি করে ট্রাকে উঠলেন কেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে রোজিনা পারভীন নামের এক পোশাকশ্রমিক বলেন, ‘কী করমু, বাধ্য হইছি। আমরা পোশাকশ্রমিক। আমাদের জীবন এভাবেই চলে।’

টহল পুলিশের ভয়ে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় ট্রাকের পেছনে যাত্রীদের টেনেহিঁচড়ে দ্রুত তোলা হচ্ছে—এমন দৃশ্য দেখা যায়। আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী বাসস্টেশন থেকেই অন্তত ১৫টি ট্রাক-পিকআপকে যাত্রী নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এসব ট্রাক-পিকআপে সামাজিক দূরত্ব বলতে কিছুই ছিল না।

এসব বিষয়ে মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সার্কেল এএসপির নেতৃত্বে ওসি মাওনা হাইওয়ে, ওসি নাওজোর ও ওসি ভরাডোবা অন্তত ৩০ জন পুলিশসহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের বৈলর পর্যন্ত ঘুরে এসেছি। পথে যাদেরই খোলা ট্রাকে যেতে দেখেছি, তাদের সম্মানের সঙ্গে করোনাভাইরাস বিষয়ে সচেতন করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাওনা হাইওয়ের অধীনে বিভিন্ন এলাকার মানুষকেও সচেতন করছি।’