Thank you for trying Sticky AMP!!

'করোনায় বাঁচলেও অভাবে বাঁচন কঠিন'

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বরিশাল নগরের গুচ্ছগ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দারা। মাস্ক ছাড়া বাইরে ঘোরাফেরা করছে মানুষ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলও চোখে পড়েনি। গতকাল পলাশপুর ৭ নম্বর গুচ্ছগ্রামে। ছবি: সাইয়ান

বরিশাল শহরে গণপরিবহন বলতে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটো আর ডিজেলচালিত মাহেন্দ্র। এগুলো তিন চাকার যান। শহরের অন্তত ১৬টি পথে পাঁচ হাজারের বেশি এমন যান চলাচল করে। স্বাভাবিক সময়ে নির্ধারিত এলাকাগুলোতে এসব যান দাঁড়াতেই যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠতেন। কিন্তু এখন তেমন পরিস্থিতি নেই। করোনার কারণে সড়কে লোকজনের চলাচল কমে গেছে। ফলে আয়ও কমে গেছে এসব যান চালকদের।

গতকাল সোমবার সকালে নগরের বাংলাবাজার মোড়ে যে দৃশ্য চোখে পড়ল, তা অন্য সময়ের মতো নয়। মাহেন্দ্র নিয়ে যাত্রীর জন্য এদিক–সেদিক তাকাচ্ছিলেন চালক আনিসুর রহমান। বয়স তাঁর ৩২। পোর্ট রোডের নৌবন্দর থেকে ব্যস্ততম সদর রোড হয়ে রূপাতলী ছোট এই পরিবহনের বড় রুট। আনিস এই পথে যাত্রী পরিবহন করেন। পরিবার নিয়ে থাকেন দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকায়।

শুধু আনিস নন, নগরের সব তিন চাকার যান চালকের সংসারে নেমে এসেছে দুর্দশা। আয় কমে যাওয়ায় তিন মাসের ঘরভাড়া বকেয়া পড়েছে আনিসের। আগে মহাজনের জমা বাবদ পাঁচ শ টাকা দিয়ে দিনে ছয়–সাত শ টাকা আয় হতো। এখন টেনেটুনে আয় দুই–আড়াই শ টাকা। কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আনিস বললেন,‘করোনায় বাঁচতে পারলেও অভাবের হাত দিয়া বাঁচনডা কঠিন অইয়্যা পড়ছে।’

যানচালক ছাড়াও কাল শহরের দিনমজুর, মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই বর্তমান দুর্দশার কথা জানান। মানুষ এখন কর্মহীন হয়ে পড়ছে, আয় কমে গেছে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি চরম সংকটে পড়লেও জীবন থেমে নেই। সামনে কী হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন সবাই।

নগরের বটতলা বাজারে গিয়ে দেখা গেল, সবজি, মাছ, মুরগি নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনা একেবারে কম। সবজি বিক্রেতা আবুল কালাম বললেন, ‘হারাদিন বইয়্যা থাহি। ব্যাচা-কিনা নাই। থাকপে কোমনে গোনে। মানসের পকেটে পয়সাই তো নাই।’

কালামের কথা ছেড়ে একটু সামনে এগোতে দেখা মুরগি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীনের (৫০) সঙ্গে। বাজারের টলশেডের এক কোণে চুপচাপ বসে ছিলেন তিনি। ব্যবসার কথা তুলতেই অনেকটা উঁচু স্বরে বলে ওঠেন, ‘ওই কতা আর জিগাইয়েন না। মোরা কি বাইচ্চা আছি? এরে কি বাঁচন কয়? দাসমরা দিয়া বাঁচনের চাইতে মরণ ভালো!’ কথার ঝাঁজে নাসিরের আক্ষেপটা বোঝা গেল।

নাসির পরিবার নিয়ে থাকেন আমির কুটির এলাকার ভাড়া বাসায়। স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে ছয়জনের সংসার। আগে এই ব্যবসার ওপর দিয়ে মোটামুটি ভালোই চলছিল। করোনার কারণে মার্চে ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়। সেই মন্দা আর কাটছেই না।

বরিশালের স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা বলছে, তারা গত মে মাসে নগরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পেশাজীবীদের নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। এর ফলাফলে দেখা যায়, নগরের ৪৭ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি পেশাজীবী কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। এসব পরিবারের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ১৫ কেজি করে খাদ্যসহায়তা পৌঁছেছে। মে মাসের শেষ দিকে লকডাউন উঠে গেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়া এবং করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় এ অবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে।

বাড়ছে সংক্রমণ, সচেতনতায় ভাটা

বিভিন্ন বাজার ও বস্তি ঘুরে দেখা যায, দোকানপাট সব খোলা। সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক হলেও বেচাকেনা কম। লোকজনের চলাচল আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু আগের মতো সচেতনতা চোখে পড়েনি। শুরুতে বেশির ভাগ লোকের মুখে মাস্ক থাকলেও এখন নেই। চায়ের দোকানগুলোতে আগের মতো ভিড় না থাকলেও শারীরিক দূরত্ব মানার প্রবণতা তেমন নেই।

>

শহরের দিনমজুর, চালক, মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখন অর্থকষ্টে পড়েছেন। তবু জীবন থেমে নেই।

নগরের বটতলা, বাংলাবাজার, পোর্টরোড এলাকার কয়েকটি চায়ের দোকান ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মানার দৃশ্য চোখে পড়েনি। বটতলা এলাকায় কাল সকালে বেশ আড্ডা দেখা গেল। তবে এঁরা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। কেউ রিকশাচালক, কেউ শ্রমিক। এঁদের একজন রিকশাচালক শফিকুল (৪০) পাশে রিকশা দাঁড় করিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কথা বলছিলেন। শারীরিক দূরত্বের কথা তুলতেই হেসে বললেন, ‘কত্তদিন আর এমন কইর‌্যা চলন যায়। কাম কইর‌্যা ঘরে চাউল-সদায় নিমু না বাঁচনের চিন্তা হরমু। না খাইয়্যা মরণের চাইতে করোনায় মরণ অইলে ল্যাডা যায়।’ শফিকের কথায় সেখানের সবাই সায় দেন। বোঝা গেল, করোনাকালের দুর্দশায় এখন এসব পরোয়া করার চিন্তা তাঁদের মাথায় নেই।

সংক্রমণ-মৃত্যুর গতি বাড়ছে

স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরিশাল বিভাগের করোনা সংক্রমণ জুনে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রতিদিনই সংক্রমণ-মৃত্যুর গতি বাড়ছে। গত রোববার পর্যন্ত এই বিভাগে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯৮ জন। সংক্রমণ শুরুর ৭০ দিনের মধ্যে জুনের শেষ ২০ দিনেই বিভাগে ১ হাজার ৪০১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বরিশাল জেলাতেই ১ হাজার ২২২ জন। এর মধ্যে আবার ৯২৩ জনই শহর এলাকার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশাল বিভাগে করোনা সংক্রমণের উল্লম্ফন দেখা দেয় জুনে। সংক্রমণের এই গতি থামাতে প্রস্তাবিত জোনভিত্তিক লাল, হলুদ, সবুজ এলাকা চিহ্নিত করে দ্রুত লকডাউন পদ্ধতি কার্যকর করা গেলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এটা যত দ্রুত করা যাবে, তত সুফল পাওয়া যাবে।

নগরের পোর্ট রোড এলাকায় গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা জিয়া উদ্দীনের চায়ের দোকান। তাঁর কথা সোজাসাপটা। বললেন, ‘দেখেন, আমাগো এলাকার মানুষের সচেতনতা কম, এইটা ঠিক। কিন্তু সেই অনুযায়ী এই এলাকায় আক্রান্ত নাই বললেই চলে। সব মানুষ গরিব। করোনায় সবার রিজিকে হাত পড়ছে। সংসার চলে খুব কষ্টে। এই অবস্থায় করোনায় বাঁচনের চাইতে সবাইর ধারে প্যাডের খিদা দূর করনের চিন্তাই বড়।’

৩০ ওয়ার্ডের ২৭টিই রেড জোন

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বললেন, ‘বরিশাল নগরে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এ ক্ষেত্রে মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানাই প্রধানত দায়ী। সংক্রমণের গতি–প্রকৃতি অনুযায়ী, বরিশাল নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টি রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংক্রমণের গতি থামাতে এর মধ্যে দুটি ওয়ার্ড পরীক্ষামূলক লকডাউনের ব্যাপারে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এই সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।’

৩৫ বস্তিতে লাখো মানুষের দুর্দশা

শহর থেকে উত্তরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে পলাশপুর গুচ্ছগ্রাম। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট পার হয়ে কীর্তনখোলা নদীপারের আটটি গুচ্ছগ্রামে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি পরিবারের বাস। গুচ্ছগ্রামের মূল সড়কগুলো পাকা হলেও গলিপথগুলো কাঁচা। গলিপথগুলোর ওপর দিয়ে বৃষ্টি ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য পানি নিষ্কাশিত হওয়ায় পানি-কাদায় থই থই করছে এলাকাটি। নদীতে জোয়ারের উচ্চতা বাড়লে পানিতে তলিয়ে যায় গলিপথ ও ঘরবাড়ি।

২০১৫ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নগরীর বস্তিগুলোতে জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৩৫টি বস্তিতে তখন জনসংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ৬৩৮ জন। জনসংখ্যা গণনা সূত্রের একটি আঙ্গিকে বছরে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি ধরে জনসংখ্যার হিসাব বের করা হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে এই ৩৫টি বস্তিতে লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৩৫৪। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে।

পলাশপুর গুচ্ছগ্রামের মূল সড়কের পাশে দোকানপাট খোলা থাকলেও তাতে ভিড়ভাট্টা আগের মতো নেই। চায়ের দোকানে লোকজনের ভিড় না থাকলেও মাস্ক ও শারীরিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। শিশুরাও দল বেঁধে রাস্তায় আসছে। ৫ নম্বর ব্লকের চা দোকানদার মিন্টু মিয়া বললেন, আগে দোকানে যে ভিড় হতো এখন আর তেমন হয় না। মানুষের পকেটে পয়সা নেই। তাই বেচাবিক্রি কমে গেছে অনেক। রোজগারে টান পড়ায় এখন সংসার চালাতে খুব কষ্ট। দোকানে পাশাপাশি বসা কযেকজন চা-বিস্কুট খাচ্ছিলেন। মুখে মাস্ক নেই। এঁদের একজন বললেন, ‘সবই জানি ভাই, কিন্তু কোনো লাভ নাই। করোনার ভয় করমু না প্যাডের চিন্তা করমু। হেইতে সব বাদ দিছি।’

চা দোকানের সামনেই সেলুনে কাজ করেন সঞ্জীব শীল (৩৩)। তিন মাস ধরে তিনিও অর্থকষ্টে আছেন। বললেন, ‘কষ্টের কথা কী কমু, এহন বেশির ভাগ মানুষ দাড়ি, চুল বাসায় কাটে। হারা দিনে পাঁচজন কাস্টমার পাওন দায়। আগে এত্তো কাজ আলহে যে বইয়্যা থাহন যাইতো না। রোজগার কমে যাওনে সংসারে টানাটানি। কত দিন এ অবস্থা চলবে ভাইব্যা কূল পাই না।’

শিক্ষায় সংকট

বরিশাল জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৫৮২। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫২। পলামপুর গুচ্ছগ্রামের মূল রাস্তায় কথা হলো একদল শিশুর সঙ্গে। ১১ বছরের জিহাদ পাশেই হজরত শাহজালাল (রহ.) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। স্কুল বন্ধ প্রায় তিন মাস। বাড়িতে লেখাপড়া তেমন হয় না। জিহাদ বলে, ‘বাড়িতে একজন শিক্ষক পড়ান। এখন বাবার আয় কমে যাওয়ায় সংসারে টানাটানি। স্যারের বেতন দেওনেও কষ্ট। জানি না কত দিন আর স্যার পড়াইবে।’ রামিমের বয়স আট বছর। সে একই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। রামিম চটপট বলল, ‘স্কুল বন্ধ, পড়াল্যাহাও বন্ধ। কবে স্কুল খোলবে স্যারেরাও কইতে পারে না, স্কুল খোললে আবার পড়মু।’

করোনা সংক্রমণ এড়াতে গত ১৫ মার্চ থেকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এসব শিশুর পড়াশোনা থমকে গেছে। শহরের কিছু বেসরকারি বিদ্যালয়ে অনলাইনে পাঠদান চালু হলেও এসব দরিদ্র পরিবারের শিশুরা সে সুবিধা পাচ্ছে না।

বরিশাল জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহ থেকে অনলাইন পাঠদান চালু করেছি। সে অনুযায়ী শিশুদের পাঠদান করানো হবে। আর শিক্ষকেরা প্রশ্নপত্র তৈরি করে অভিভাবকদের হাতে দেবেন। তাঁরা পরীক্ষা নিয়ে উত্তরপত্র সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেবেন।’

শুধু প্রাথমিক নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে উচ্চমাধ্যমিকে এবার ৬৯ হাজার ৯৩৮ শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। গত ১ এপ্রিল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া বিভাগে ২ হাজার ৭০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৪ লাখ ৪৯ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর লেখাপড়াও এখন বন্ধ।

মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টিভির মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম চললেও কেব্‌ল চ্যানেলের সুবিধা না থাকায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এই সুবিধা পাচ্ছে না।

পলিটেকনিক রোডের স্কুলছাত্র ফয়সাল নগরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার মা দুলিয়া বেগম গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালান। ঘরে টেলিভিশন নেই। ফয়সাল বলল, ‘ঘরে টিভি নাই, সংসদ টেলিভিশন দেখমু ক্যামনে?’ ফয়সালের মতো দরিদ্র পরিবারের এমন অনেক শিক্ষার্থীই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

বিভাগীয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বললেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলের অন্তত ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী এই সুবিধা পাচ্ছে না। আমরা শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পাঠদানের বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে।

পেশায় টিকতে পারছেন না অনেকে

করোনার দুর্যোগের কারণে অনেকেই পেশা হারিয়েছেন। নগরের বিবির পুকুরপাড়ে ভাসমান দোকানে চিকেন ফ্রাইসহ বিভিন্ন খাবার বিক্রি করতেন সাদ্দাম হোসেন (৩০)। তিন মাস ধরে দোকানটি বন্ধ। এতে দুর্দশায় পড়েছে তাঁর তিনজনের পরিবার। নিরুপায় হয়ে মাসখানেক আগে দোকানের সামনে মাস্কসহ বিভিন্ন সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি করা শুরু করেন। এতে সামান্য আয় হলেও আগের মতো সংসার চলে না। সাদ্দাম বলেন, ‘খিদা তো আর করোনার ডর মানে না।’

গত অক্টোবরে বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ পোভার্টি অ্যাসেসমেন্ট’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে দেশের অর্থনীতির গতি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমেছে।

উল্লিখিত সময়ে বরিশালে দারিদ্র্য কমেছে দ্রুতগতিতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য নিয়ে সংস্থাটি এই প্রতিবেদন তৈরি করে।

২০১০ সালে বরিশালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৪ শতাংশে। তবে দারিদ্র্য হ্রাসের এই আশার খবরের মধ্যে করোনাভাইরাসের আগ্রাসী থাবায় সারা বিশ্বের অর্থনীতি এখন স্থবির। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে প্রবলভাবে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের জীবনে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

বরিশালের বেসরকারি সংস্থা রিচ টু আনরিচের পরিচালক রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনাকালের মানুষের জীবিকা নিয়ে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে আমরা গত মে মাসে বরিশাল নগরে একটি জরিপে অংশ নিই। এতে আমরা দেখেছি, বরিশাল নগরের ক্ষুদ্র ও মাঝারি পেশায় নিয়োজিত ৪৭ শতাংশ লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এতে এসব পরিবারে চরম আর্থিক দুর্দশা নেমে আসায় খাবারে সংকট হচ্ছে। অপর এক জরিপে আমরা দেখেছি, সরকারি–বেসরকারি এবং ব্যক্তি উদ্যোগে গত তিন মাসে এসব পরিবারের কাছে গড়ে ১৫ কেজি করে খাদ্যসহায়তা পৌঁছেছে।’

রফিকুল আলম বলেন, অর্থনীতির ওপর করোনাভাইরাস সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এই প্রণোদনার সুফল নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।