Thank you for trying Sticky AMP!!

'বাবু, তুই আইছসনি?'

সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকায় খুন হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী অভিষেক দে দ্বীপের মা-বাবার আহাজারি। গতকাল সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো

বড় করে বাঁধানো একটি ছবি। মা-ছেলের মধুর স্মৃতি ফুটে উঠেছে তাতে। ছবিটি বুকে চেপে নীরবে কাঁদছিলেন তিনি। শহীদ বেদিতে ফুল রেখে যেন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না। উচ্চ স্বরে বিলাপ ‘বাবু, ও বাবু..., তুই কই গেলিরে বাবু। তুই আইছসনি শহীদ মিনারে। দেখ তর লাইগা ফুল লইয়া আইছি। আমরার তো আর কেউ রইল না রে...!’

এই ‘বাবু’ হচ্ছেন ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের এক পক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত অভিষেক দে (১৮)। গতকাল ভোরে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা অনিতা দে। এ সময় তাঁর সঙ্গে স্বামী দীপক দেও ছিলেন। ছেলেহারা মা-বাবার আর্তনাদে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণে যেন ক্ষণিকের ছেদ পড়ে। ব্যস্ততার মধ্যেও তাঁদের প্রতি সমব্যথী হতে দেখা গেছে মানুষজনকে। একপর্যায়ে শহীদ বেদির এক পাশে বসে ছেলের ছবি বুকে নিয়ে বিলাপ করেন অনিতা দে। আর বাবা দুই হাত উঁচিয়ে প্রার্থনা করার মতো ছেলে হত্যার বিচার চান। তাঁদের কান্নায়, কথায় ভারী হয়ে উঠেছিল শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।

সিলেট নগরীর সাদিপুরে বসবাস করেন অনিতা-দীপক দম্পতি। অভিষেক তাঁদের একমাত্র সন্তান। ছাত্রলীগের একটি পক্ষে সক্রিয় কর্মী অভিষেক ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁর সঙ্গী ছাত্রলীগ কর্মীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ ঘটনায় ছুরিকাঘাতকারী ছাত্রলীগ কর্মী সৈকত রায়সহ চারজনের নামোল্লেখ করে মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় মামলা করেছেন দীপক। ঘটনার সময় আটক সৈকত ছাড়া আর কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

অভিষেককে আদর করে ‘বাবু’ বলে ডাকতেন দীপক-অনিতা। শহীদ মিনারে অবস্থানকালে বারবার ‘বাবু বাবু...’ বলে চিৎকার করে কাঁদছিলেন। তাঁরা জানান, গত বছর একুশে ফেব্রুয়ারি ভোরে ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়েছিলেন অভিষেক। বেঁচে থাকলে আজও ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে যেত—এ কথা জানিয়ে অনিতা বলেন, ‘আমার বাবু কোনো রাজনীতি করত না। মাত্র এসএসসি পাস করি কলেজে ভর্তি হইছিল। রাতে খেলা দেখতে গেছিল টিলাগড় মাঠে। এরপর আর প্রাণ নিয়া ফিরে নাই আমার বাবু।’

কান্নার সঙ্গে নানা প্রশ্ন তুলেন অনিতা। তিনি বলেন, ‘আমার বাবুকে (অভিষেক) যখন হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন সৈকতও হাসপাতালে ছিল। তাকে পুলিশ আটক করেনি। সে নিজেই ধরা দিছে। এটা তাদের একটা চালাকি। তা না হলে আমার ছেলে হত্যার ১৫ দিন পার হলেও পুলিশ আর কোনো আসামিকে ধরছে না কেনে?’

শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘আসামিরা সবাই পলাতক। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি তাদের ধরার। কিন্তু আসামিদের ব্যবহার করা সব ফোন বন্ধ। তারা সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। তাই তাদের ধরতে দেরি হচ্ছে।’