Thank you for trying Sticky AMP!!

'মাইনাস' থেকে শুরু করে এখন অনুকরণীয়

নিজের খেত থেকে ফুল তুলছেন শাহানারা বেগম। ছবি: প্রথম আলো

ছোট মেয়ের বয়স যখন ৯ মাস, তখন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে স্বামী মারা যান। মাথার ওপর তখন পাঁচ লাখ টাকা ঋণের চাপ, বন্ধকে রাখা আবাদি পাঁচ বিঘা জমি। ঘরে খাবার নেই, মাথা গোঁজার ভালো ঠাঁই নেই।

জীবনের নির্মম বাস্তবতা দেখার পর ঘুরে দাঁড়ালেন শাহানারা। শুরু হলো নতুন এক সংগ্রাম। এক বিঘা জমি ইজারা নিয়ে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করলেন। প্রথম বছরেই ফলন ভালো, লাভও বেশ। পরের বছর দেড় বিঘা, এরপর আড়াই বিঘা, পাঁচ বিঘা—এভাবে চলতে থাকে ফুল চাষ আর ঘুরতে থাকে ভাগ্যের চাকা।

২১ বছর পর শাহানারার এখন রাস্তার পাশে ৪০ লাখ টাকার সীমানাঘেরা দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। ফুল চাষের জন্য কিনেছেন আরও পাঁচ বিঘা জমি। ৯ মাসের সেই মেয়েকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করিয়েছেন। বিয়ে দিয়েছেন মহা-ধুমধামে।

গল্পের মতো শোনালেও এটি যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী ইউনিয়নের পটুয়াপাড়া গ্রামের শাহানারা বেগমের জীবনসংগ্রামের বাস্তব চিত্র। আশপাশের ১০ গ্রামের নারীদের কাছে শাহানারা বেগম এখন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

শাহানারার সংগ্রামের বিষয়ে গদখালী ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘শাহানারা বেগম আমাদের গর্ব। শূন্য থেকে না, আমি বলব তিনি মাইনাস থেকে জীবনসংগ্রাম শুরু করেন। স্বামীর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে তিন সন্তানকে মানুষ করেছেন। তিনি আমাদের নারীদের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বিভিন্ন সময়ে আমরা তাঁকে ফুল চাষের প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। তিনি খুবই ভালো করছেন। সরকারি সহায়তা পেলে তিনি আরও ভালো করতে পারবেন।’

সম্প্রতি শাহানারা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, গ্রামের রাস্তার পাশে ১৫ শতক জমির ওপর সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা দৃষ্টিনন্দন একতলা নতুন বাড়ি। বাড়ির আঙিনায় গ্লাডিওলাস ফুলের বীজ শুকানো হচ্ছে। ওই বীজ সংরক্ষণ ও পরিচর্যায় কাজ করছেন শাহানারা নিজেই।

২১ বছর আগে শাহানারার স্বামী শাহ আলম ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বামী সবজির চাষ ও সবজির খুচরা ব্যবসা করতেন। হঠাৎ ক্যানসারে আক্রান্ত হন তিনি। খেতের পাঁচ বিঘা জমি বন্ধক রেখে ও আরও অন্তত পাঁচ লাখ টাকা ধারদেনা করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এমনকি ভারতে নিয়েও চিকিৎসা করানো হয়। ১৯৯৭ সালে তিনি মারা যান। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ের বয়স ৯ মাস। বড় দুই ছেলেমেয়ে তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত। অভাব-অনটনের কারণে তাদের বেশি দূর পড়াতে পারেননি।

জীবনসংগ্রামের কথা জানতে চাইলে শাহানারা বেগম বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর আমি দিশাহারা হয়ে পড়ি। বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারিনি। সম্বল বলতে ছিল স্বামীর রেখে যাওয়া ১৫ বস্তা গ্লাডিওলাস ফুলের বীজ।’ তিনি বলেন, প্রথমে গ্রামবাসীর সহায়তায় এক বিঘা জমি ইজারা নিয়ে সেই বীজ লাগান। ওই বীজের ফুল বিক্রি করে ভালোই লাভ হলো। পরের বছর দেড় বিঘায় চাষ করেন। তার পরের বছর আড়াই বিঘা। এভাবে ফুলের চাষ বাড়তে থাকে। নিজেই ফুল চাষ পরিচর্যা করেন। লাভের টাকা দিয়ে একে একে স্বামীর বন্ধক রাখা সব জমি ছাড়িয়ে নেন। নতুন করে আরও পাঁচ বিঘা ফসলের জমি কিনেছেন। দুই লাখ টাকা খচর করে দুই মেয়েকে ধুমধামের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছি। ৪০ লাখ টাকা খরচ করে রাস্তার পাশে ১৫ শতক জমি কিনে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘিরে পাকা বসতবাড়ি করেছি। এখন নিজের ১০ বিঘা জমি রয়েছে মাঠে।’

‘এখন আমি খুবই ভালো আছি’ উল্লেখ করে শাহানারা বেগম বলেন, ‘আমার ইচ্ছা রয়েছে, দুই বিঘা জমিতে একটি শেড নির্মাণ করে জারবেরা ফুলের চাষ শুরু করব। কিন্তু এর জন্য টাকা লাগবে ১০ লাখ। সরকার সহজ শর্তে ১০ লাখ টাকা ঋণ দিলে সেটি করতে পারতাম।’