Thank you for trying Sticky AMP!!

'স্বেচ্ছাসেবীরা থাকলে আঁধার পেরিয়ে আলো আসবেই'

বয়সে তরুণ। জন্ম দরিদ্র পরিবারে। পড়াশোনা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। অল্প বয়সে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে পড়ায় কখনো বাসচালকের সহকারী, কখনো রাজমিস্ত্রির সহকারী, আবার কখনো জুতার দোকানে কাজ করেছেন। এখন চাকরি করেন সরকারি একটি দপ্তরের নৈশপ্রহরী হিসেবে। স্ত্রীর সন্তান জন্মের সময় হঠাৎ রক্তের দরকার পড়ে। এক ব্যাগ রক্তের জন্য অনেক ছোটাছুটি করতে হয়। অনেক কষ্টে মেলে এক ব্যাগ রক্ত। বেঁচে যান তাঁর স্ত্রী। সেই থেকে শুরু হয় মুমূর্ষু রোগীর জন্য রক্ত সংগ্রহের নেশা।

রক্তদাতার সন্ধানে তিনি বেছে নেন অনলাইন মাধ্যম। গঠন করেন ‘বগুড়া অনলাইন রক্তদাতা সংগঠন’ নামের একটি সংগঠন। কারও রক্তের প্রয়োজন পড়লে একটি ফেসবুক পেজে রক্তের গ্রুপ লিখে পোস্ট দেন। রক্তদাতাদের সঙ্গে করে ছুটে যান হাসপাতালে মুমূর্ষু রোগীর কাছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই তরুণ হলেন বগুড়ার সোহেল রানা (২৬)। গত চার বছরে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছেন। এই মহৎ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে সোহেলের অনলাইন গ্রুপে যুক্ত হয়েছেন ৪৭ হাজার মানুষ। আর তাঁর ফেসবুক পেজে সদস্যসংখ্যা আট হাজার। বগুড়া শহরের শতাধিক তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে রক্ত সংগ্রহের কাজ করছেন সোহেল রানার সঙ্গে। তাঁরা নিজেরাও স্বেচ্ছায় রক্তদান করছেন। রাত–দিন মুঠোফোনে সক্রিয় থাকেন সোহেল রানা। যখনই কোনো রোগীর রক্তের প্রয়োজন পড়ে, সোহেলের গ্রুপের রক্তদাতারা সেখানে এগিয়ে যান রক্ত দিতে। সোহেলের চাওয়া, রক্তের জন্য একজন মুমূর্ষু রোগীও যেন মারা না যায়।

ভলান্টারি সার্ভিসেস ওভারসিজ (ভিএসও) এবং প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা মতবিনিময় সভায় সোহেল যখন স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে পাঁচ হাজার মানুষের জীবন বাঁচানোর গল্প শোনান, তখন করতালি দিয়ে তাঁর এ অনন্য কাজে সমর্থন জানান উপস্থিত অতিথি ও স্বেচ্ছাসেবীরা। প্রথম আলোর বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে এ সভা হয়।

সোহেল রানার মতো অন্তত ৩০টি সংগঠনের ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক, স্বেচ্ছাসেবা সংগঠক এবং অতিথিরা এসেছিলেন স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা মতবিনিময় সভায়। বেশির ভাগ স্বেচ্ছাসেবকই বয়সে তরুণ ও শিক্ষার্থী। তাঁদের কেউ সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের শিক্ষার জন্য কাজ করেন, কেউ বস্তির শিশুদের নিয়ে পাঠশালা চালান, কেউ বাল্যবিবাহ রোধে, আবার কেউ নারী অধিকার আদায়ে, কেউ পরিবেশ রক্ষায়, কেউবা রক্তদান সেবায় নিয়োজিত। মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছেন তাঁরা। তরুণদের স্বেচ্ছাসেবাকে উৎসাহ দিতে শুরু হচ্ছে ‘স্বেচ্ছাসেবা সম্মাননা ২০২০’। ভালো কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার এ উদ্যোগ নিয়েছে ভলান্টারি সার্ভিসেস ওভারসিজ (ভিএসও) এবং প্রথম আলো। বেলা ১১টায় এ মতবিনিময় সভা শুরু হয়। সভায় স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও বিশিষ্ট শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা, শিশু ও সাংস্কৃতিক সংগঠক, কবি ও লেখক এবং নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বেচ্ছাসেবীরা নিজেদের পরিচয় তুলে ধরেন। এরপর প্রথম আলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে নির্মিত দুটি তথ্যচিত্র নায়ক ও অধিনায়কেরা এবং আলোর পাঠশালা দেখানো হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর মার্কেটিং বিভাগের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহেদ বিন সারোয়ার। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার পারভেজ।

সভায় সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি মাসুদার রহমান বলেন, ‘দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অপরাজনীতি ও দুর্বৃত্তায়নের গল্প শুনতে শুনতে মনটা যখন বিষাদে ভরে যায়, তখন নীরবে নিভৃতে কাজ করে চলা দেশের হাজারো তরুণদের দুর্দান্ত, অনবদ্য ও আলোকিত এসব কাজ দেখে আশার আলো জাগে।’

কবি ও কথাসাহিত্যিক বজলুল করিম বাহার বলেন, দেশে যখন ভালো কাজ সংকুচিত হচ্ছে, ঠিক তখনই তরুণদের এসব ভালো কাজ দুর্দান্ত আশা জাগাচ্ছে। এই তরুণেরা পাশে থাকলে বাংলাদেশ জেগে উঠবেই, আঁধার ঠেলে আলো আসবেই। সরকারি আজিজুল হক কলেজের উপাধ্যক্ষ ফজলুল হক বলেন, আলোকিত কাজ করে চলা এই তরুণেরাই ‘এক টুকরো বাংলাদেশ’। সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জোহরা ওয়াহিদা রহমান বলেন, ‘দেশটাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে হবে।

কলেজ ক্যাম্পাসে ফেলা ময়লা কুড়িয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। তাতে সারা জীবন ময়লা কুড়ানোতেই পণ্ডশ্রম হবে। ময়লা যাতে

কেউ বাইরে না ফেলে, সেই শিকড়ে কাজ করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবার জন্য ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। নতুন প্রজন্মের স্বেচ্ছাসেবীরা এভাবে কাজ করতে থাকলে একদিন বাংলাদেশ বদলে যাবেই, আলো আসবেই।’

৩৫ বছর বয়সী যেকোনো স্বেচ্ছাসেবক বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে তাঁদের কার্যক্রমের জন্য এই সম্মাননা পাবে। আবেদন করার তথ্য মিলবে (http://prothomalo.com/volunteeraward) এই ওয়েবসাইটে।