Thank you for trying Sticky AMP!!

শিকলবন্দী জীবন যাপন করছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ৪০ বছর বয়সী নুর আলম। গত ২৮ মার্চ বিকেলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সরদারপাড়া এলাকায়

সাত বছর ধরে শিকলবন্দী নুর আলম, অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

বাঁশ ও টিনের বেড়ার ছোট্ট টিনের ঘর। ঘরটির এক পাশে সিমেন্টের একটি খুঁটি। সেই খুঁটির সঙ্গে নুর আলমের বাঁ হাতে শিকল লাগিয়ে তালা দিয়ে রাখা। পাশেই বিছানো একটি পাটিতে মাথা নিচু করে বসে আছেন তিনি। এভাবেই সাত বছর ধরে শিকলবন্দী জীবন যাপন করছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ৪০ বছর বয়সী নুর আলম। অর্থের অভাবে তাঁর হচ্ছে না কোনো চিকিৎসা।

নুর আলম পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের সরদারপাড়া এলাকার মৃত হকিকুল ইসলামের ছেলে। একসময় কর্মঠ টগবগে যুবক ছিলেন মা–বাবার একমাত্র সন্তান নুর আলম। বিয়ে করে হয়েছেন চার সন্তানের বাবা। পরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। চোখের সামনে ছেলের এমন দুরবস্থা ও স্বামীকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন নুর নেহার।

স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টাকার অভাবে দরিদ্র পরিবারটি চিকিৎসা করাতে পারছে না নুর আলমের। শিকলবন্দী থেকে ছাড়া পেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। মাঝেমধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় লোকজনের ওপর হামলা করে বসেন। বাড়িঘরে ভাঙচুরও চালান। নুর আলমের জ্বালাতন থেকে বাঁচতে সাত বছর ধরে তাঁকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।

গত ২৮ মার্চ বিকেলে নুর আলমদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর মা নুর নেহারের সঙ্গে। কথা বলতে বলতে চোখের পানি মুছছিলেন তিনি। নুর নেহার বললেন, ‘মুই (আমি) খালি চাহেচু (চাচ্ছি) কেংকো (কীভাবে) শিকলখান থেকে মুক্তি পাবে ছুয়াডা (ছেলেটা)। দুই বছর বয়সে বাপ হেরাইচে। কত্ত কষ্ট করে ছুডায়াক বড় করনু (করলাম)। চোখের সামনোত আর এত দুঃখ সহিবা পারুনা বাপু। মোর (আমার) বিশ্বাস ছুয়াডার চিকিৎসা করিলে ভাল্‌ হবে। কিন্তু হামার খাবারে নাই, কোনঠে পামো (পাবো) চিকিৎসার এত টাকা?’

নুর নেহার, স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নুর আলমের বয়স যখন মাত্র দুই বছর, তখনই অসুস্থ হয়ে মারা যান বাবা হকিকুল ইসলাম। এর পর থেকেই একমাত্র ছেলেকে নিয়ে শুরু হয় নুর নেহারের জীবনসংগ্রাম। মানুষের বাড়িতে কাজ করে আর বাবা-ভাইদের সহায়তায় একমাত্র ছেলেকে মানুষ করার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। স্কুলে ভর্তি করিয়ে ছেলেকে পড়িয়েছেন ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। কিছুটা বড় হলে নুর আলম চলে যান চট্টগ্রামে। সেখানে রড মিলের কাজ নেন তিনি। কয়েক বছর পর সেখান থেকে ফিরে এসে বিয়ে করেন নুর আলম। তাঁর ঘরে জন্ম হয় দুই মেয়ের। বিয়ের পর বাড়িতে থেকেই পার্শ্ববর্তী ভারত সীমান্তঘেঁষা মহানন্দা নদীতে পাথর তোলার কাজ শুরু করেন তিনি। মা, স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছিল নুর আলমের সংসার। মহানন্দা নদীতে পাথর তুলতে তুলতে কোনো কারণ ছাড়াই সীমান্ত পেরিয়ে দুবার ভারতে চলে যান নুর আলম। দুবারই আটক হন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে। তিন বছরের বেশি সময় ভারতে কারাভোগ শেষে বাড়িতে ফিরে কিছুদিন ভালোই ছিলেন তিনি। এরপর আরও দুই সন্তানের বাবা হন। ধীরে ধীরে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন নুর আলম।

সিমেন্টের একটি খুঁটির সঙ্গে নুর আলমের বাঁ হাতে শিকল লাগিয়ে তালা দিয়ে রাখা। গত ২৮ মার্চ বিকেলে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার সরদারপাড়া এলাকায়

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, নুর আলমের শিকলবন্দী থাকার বিষয়টি তাঁরা জেনেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। উপজেলায় রোগী কল্যাণ সমিতি আছে, সেখানে তহবিলও আছে। সেই সমিতির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।