Thank you for trying Sticky AMP!!

বিদ্যুতের বদৌলতে এখন কুপিবাতি আর দেখায় যায় না। খুলনা কালেক্টর সোসাইটির প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে সেকালের বিভিন্ন ধরনের কুপিবাতি। সংগ্রহশালা দেখছেন কয়েকজন দর্শনার্থী। শুক্রবার নগরের সোনাডাঙ্গা এলাকায়

তালা–চাবি থেকে শুরু করে বিরল ব্যাংক নোট, মসলিনও দেখা যাবে যে প্রদর্শনীতে

কথায় বলে, শখের দাম লাখ টাকা। কারও শখ পুরোনো মুদ্রা বা ডাকটিকিট সংগ্রহের, কেউবা সংগ্রহে রেখেছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দলিল। বিভিন্ন ধরনের তালা-চাবি সংগ্রহের শখ আছে কারও কারও। ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা এসব বস্তুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নতুন-পুরোনো ইতিহাস।

মানুষের ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা এসব বিরল জিনিসের প্রদর্শনী চলছে খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার ‘এনজিও ফোরাম’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়ে। ব্যক্তিগত সংগ্রহের এমন প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা।

তিন দিনব্যাপী ওই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ‘খুলনা কালেক্টরস সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন। ‘খুলনা কালেক্টরস শো’ নামের ওই প্রদর্শনী গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাহমুদ হোসেন। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলা প্রদর্শনী কাল শনিবার শেষ হবে।

বিরল ও পুরোনো সংগ্রহ নিয়ে দেশ-বিদেশের ৩১ জন সংগ্রাহক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। কেউ প্রদর্শনীতে এনেছেন ডাকটিকিট, কেউ দেশি-বিদেশি মুদ্রা, বিরল ব্যাংক নোট, ক্যামেরা। আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিচিহ্নও। প্রদর্শিত হচ্ছে লাল-সবুজের পত্রিকা, মসলিন শাড়ি, সেকালের কুপি, লুকিয়ে রাখার উপযোগী ধারালো অস্ত্র গুপ্তি, তলোয়ারসহ নানা বস্তু।

প্রদর্শিত হচ্ছে লাল-সবুজের পত্রিকা, মসলিন শাড়ি, সেকালের কুপি, লুকিয়ে রাখার উপযোগী ধারালো অস্ত্র গুপ্তি, তলোয়ারসহ নানা বস্তু। শুক্রবার খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকায়

বিভিন্ন ধরনের তালা-চাবি সংগ্রহের শখ আছে নাজমুল হকের (মন্টু)। তালা-চাবিতে যে কত ধরনের শৈল্পিক চর্চা হতে পারে, তা তাঁর সংগ্রহশালা না দেখলে বোঝা যাবে না। কোনোটি লম্বা, কোনোটি ছোট, আবার বিচ্ছু আকারের তালাও আছে। ৫০টির মতো এমন বিভিন্ন ধরনের তালা–চাবি নিয়ে প্রদর্শনীতে হাজির হয়েছেন তিনি।

নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মূলত শখ থেকেই তিনি তালা–চাবি সংগ্রহ শুরু করেন। এখন তাঁর সংগ্রহে আছে তিন শতাধিক চাবি ও আড়াই শতাধিক তালা। নিয়ে আসার ঝামেলায় মাত্র ৫০টি প্রদর্শনীতে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, প্রদর্শনীতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিচিত্র ধরনের তালা ও চাবি দেখে মুগ্ধ মানুষ। নতুন প্রজন্ম এসব দেখে শিখতে পারছে।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার এম এম হাসানের বাবা ও দাদা একসময় ডাক বিভাগে চাকরি করতেন। ছোটবেলা থেকে ডাকটিকিটের প্রতি তাঁর দুর্বলতা ছিল। দিন দিন তাঁর সেই নেশা ছড়িয়েছে বিরল বই, স্মারক, সিনেমার টিকিট সংগ্রহে। তিনি গড়েছেন হাজারো বইয়ের সংগ্রহশালা।

এম এম হাসান বলেন, ‘বাবা এ বি এম সবুর আমার অনুপ্রেরণা। সংগ্রহে খুব আনন্দ পাই। নতুন প্রজন্ম টেক্সট বইয়ের বাইরের পড়াশোনাবিমুখ। গ্রামে একটি পাঠাগার করেছি। আমি বিশ্বাস করি, এখান থেকেই আলোকিত মানুষ বেরিয়ে আসবেন।’

প্রদর্শনীতে বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা দেখছেন দুজন দর্শনার্থী। শুক্রবার দুপুরে খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকায়

সার্কভুক্ত বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করে প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করেছেন ভারতের বর্ধমান থেকে আসা রূপম আলী। তিনি বলেন, ব্রিটিশ ভারতের নমুনা নোট দিয়েই সংগ্রহ শুরু করেন। এখন শতাধিক দেশের দেড় হাজারের বেশি নমুনা ব্যাংক নোট সংগ্রহে আছে তাঁর। এসব নোটের সিরিয়াল নম্বর শূন্য।

আজ শুক্রবার দুপুরে ঘুরে ঘুরে বিরল বস্তুর এ প্রদর্শনী দেখছিলেন মঞ্জুর কাদের। তিনি বলেন, ‘বিরল বস্তুর প্রদর্শনী দেখে খুবই ভালো লাগছে। জাদুঘরে সাধারণত ইতিহাস–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু মানুষের ব্যক্তিগত সংগ্রহের সমৃদ্ধি তার চেয়ে বেশি। যদিও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব নেই। কিন্তু বস্তুগুলো সত্যিই বিরল। নতুন প্রজন্ম এটা দেখে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবে। এখন বন্ধুর সঙ্গে এসেছি, কাল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসব।’

খুলনায় ব্যক্তিগত সংগ্রহের বিভিন্ন বস্তু নিয়ে চলছে প্রদর্শনী। শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে নগরের সোনাডাঙ্গা এলাকায়

যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী তুহিন আহমেদ গত ডিসেম্বরে ঢাকায় ফিরেছেন। তিনি নিজেও একজন সংগ্রাহক। প্রদর্শনীর কথা শুনে তিনি ঢাকা থেকে খুলনায় চলে এসেছেন। তুহিন আহমেদ বলেন, ‘প্রদর্শনীতে এসে খুবই ভালো লাগছে। দেশ-বিদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা বস্তু দেখে খুবই ভালো লাগছে। আমরা হয়তো একসময় অ্যানালগ ক্যামেরা ব্যবহার করেছি কিন্তু নতুন প্রজন্ম ওই ক্যামেরা সম্পর্কে কিছুই জানে না। তাঁদের কাছে পুরোনো ক্যামেরা পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে নতুন ধারণা দেবে। এ ধরনের প্রদর্শনী নতুন-পুরোনো মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে।’

খুলনা কালেক্টরস সোসাইটির সহসভাপতি জি কে এম লুৎফর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, প্রদর্শনীতে ভারত, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মোট ৩১ জন সংগ্রাহক অংশ নিয়েছেন। খুলনায় এটা দ্বিতীয় আয়োজন, প্রথম আয়োজন হয়েছিল গত বছরের জানুয়ারিতে। তখন করোনার প্রভাব থাকায় খুব বেশি মানুষকে আকর্ষণ করতে পারেনি। তবে এবার ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।