নামমাত্র সেবা দিয়ে চলছে দোহাজারী পৌরসভা
২০১৭ সালে দোহাজারী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ সাইদুল্লাহ। নাগরিক সেবা বাড়বে, রাস্তাঘাট উন্নত হবে, সড়কে সড়কে বাতি বসবে—এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর। কিন্তু ছয় বছর পর এসে তাঁর মধ্যে সে উচ্ছ্বাস এখন আর নেই।
পৌরসভার রেলস্টেশন এলাকার বাসিন্দা সাইদুল্লাহ পৌরসেবার মান নিয়ে প্রথম আলোর কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন। গত মঙ্গলবার তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, পৌরসভার বেশির ভাগ সড়ক এখনো কাঁচা, সরু। পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলতে কিছুই নেই। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা। আদতে পৌরসেবার সিকি ভাগও মিলছে না।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে শঙ্খ নদের গা ঘেঁষে দোহাজারী পৌরসভা। ২০১৭ সালের ১১ মে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত এ পৌরসভার আয়তন প্রায় ৪০ দশমিক ৭৪ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ড সংখ্যা ৯টি। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের বসবাস। হোল্ডিংসংখ্যা ৭ হাজার ৭৯০। ছয় বছর পার হলেও শহুরে জীবনের তেমন কোনো ছোঁয়া লাগেনি এ পৌরসভায়।
পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, পৌর এলাকার প্রায় ৫১ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ২৮ কিলোমিটার সড়কই কাঁচা। পাকা সড়ক আছে মাত্র ১২ কিলোমিটার। বাকি সড়ক মোটামুটি ঢালাই দেওয়া। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রেলস্টেশন সড়কের একটি অংশ কাদা-পানিতে একাকার। এসব মাড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন পথচারীরা। পৌরসভার বেশ কিছু এবড়োখেবড়ো সড়কে গাড়ি চলছিল হেলেদুলে। কিছু সড়ক এতই সরু যে দুটি যান পাশাপাশি চলার সুযোগ নেই। এ ছাড়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপটে সরু সড়কে যানজটও বাড়ছে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে পৌরসভা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল প্রশাসকের মাধ্যমে। ছয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও একজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
এরপর চলতি বছরের ১৭ জুলাই প্রথমবারের মতো পৌর নির্বাচন হয়। এতে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. লোকমান হাকিম। সেবার ঘাটতি থাকার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
মেয়র প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক মাস আগে তিনি নির্বাচিত হয়েছে। ধীরে ধীরে পৌরসভার সেবার মান বাড়ানো হবে।
দোহাজারীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো ডাস্টবিন নেই। সড়কের ওপর পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। সড়কের পাশে ও নিচে যে নালা নর্দমা রয়েছে, সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় লোকজন। স্থানীয় ১০ বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভা থেকে নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় না। দোহাজারী রেলস্টেশনের পাশে দিনের পর দিন আবর্জনা জমে থাকে। নালা নর্দমাগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে নালা উপচে পানি চলে আসে সড়কে। এতে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সন্ধ্যা নামলেই পৌর এলাকার বেশির ভাগ সড়ক অন্ধকারে ডুবে যায়। পাঁচটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে কোনো বাতি লাগানো নেই। কর্তৃপক্ষ বলছে, সড়কে বর্তমানে মাত্র ৪২০টি বাতি আছে। দরকার অন্তত দুই হাজার।
পৌরসভার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সেবার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। এতে মশক নিধন কার্যক্রমের কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু দেওয়ানহাট এলাকার দোকানি আবদুল মান্নান বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও মশা মারার ওষুধ ছিটানো হয়নি। মশার জ্বালায় সন্ধ্যার পর থেকে দোকানে বসা যায় না। আশপাশে ময়লা-আবর্জনা থাকায় মশা কমছে না।
ছয় বছরেও কর নির্ধারণ হয়নি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌরসভায় হোল্ডিং কর, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের কর, ইমারত নির্মাণ/পুনর্নির্মাণসহ বিভিন্ন শ্রেণির কর কত হবে, গত ছয় বছরেও তা নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের আদলে বর্তমানে কর আদায় করা হচ্ছে। বর্তমানে হাটবাজার ইজারা, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন ফিসহ নানা খাতে বছরে ১ কোটি ২০ লাখ থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মতো আয় হচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামছুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কোথায় কর কত হবে, তা মূল্যায়নের কার্যক্রম চলছে। মাস তিনেকের মধ্যে কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া নতুন পৌরসভা হওয়ায় সেবা নিয়ে কিছুটা ঘাটতি আছে। এসব ঘাটতি কমাতে কাজ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
-
পাঠ্যবই থেকে আলোচিত ‘শরীফার গল্প’ বাদ দিতে সুপারিশ বিশেষজ্ঞ কমিটির
-
ফোর্বসের এশিয়ার তরুণ উদ্যোক্তাদের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি
-
ছাগলনাইয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ঘোষণা ছিল অবৈধ: হাইকোর্ট
-
কেজরিওয়ালকে নিয়ে বিজেপি দিশাহারা, ইডির আরজিও খারিজ
-
যুদ্ধ শেষে গাজায় শান্তিরক্ষী মোতায়েনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের