Thank you for trying Sticky AMP!!

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি বন্ধে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানালেন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ছাত্রলীগের এক নেতা। তাঁর নাম মুশফিক তাহমিদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে অন্যের হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বায়জিদ খানকে প্রক্টর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বায়জিদ দাবি করেছিলেন, মুশফিক তাহমিদের নির্দেশে তিনি ভর্তি পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ দিয়েছেন। এ ঘটনায় মুশফিক তাহমিদকে তখন ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের প্যাডে উপাচার্য বরাবর ৭ দফা দাবিসহ একটি স্মারকলিপি জমা দেন মুশফিক তাহমিদ ও তাঁর অনুসারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরের কাছে এর অনুলিপি জমা দিয়েছেন তিনি।

বিষয়টিকে হাস্যকর আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছাড়া অন্য কেউ সংগঠনের প্যাড ব্যবহার করলে তাঁকে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে অনুমতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে মুশফিক তাহমিদ আমার ও সাধারণ সম্পাদকের কোনো অনুমতি নেননি।’

গোলাম কিবরিয়া আরও বলেন, যে ব্যক্তি প্রক্সির সঙ্গে জড়িত বলে এর আগে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি যখন এমন দাবি জানান, তখন সেটি হাস্যকর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য সুলতান উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর স্মারকলিপি গ্রহণের সময় আমি তাঁকে বলেছি, তোমরা যে উপদেশগুলো এখন দিচ্ছ, ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেসব বিষয়ে তৎপর রয়েছে।’

মুশফিক তাহমিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করা বা তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে এই উপ-উপাচার্য বলেন, ‘যে কেউ যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযোগটি নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে শাস্তির আওতায় আনা আইনবিরুদ্ধ। তবে গতবার যে নামগুলো পত্রপত্রিকায় এসেছে তাঁরা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। যাচাই-বাছাই করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’

মুশফিক তাহমিদ দেওয়া স্মারকলিপির দাবিগুলো হলো, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে জড়িত চিহ্নিত চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে হবে; বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে মেসের মালিকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে হবে; ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; অতিরিক্ত রিকশা-অটোরিকশা ভাড়া ও হোটেলের খাবারের বর্ধিত মূল্য আদায় বন্ধ করতে হবে; ভর্তি–ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা যেন কোনো ধরনের র‍্যাগিং ও অশালীন আচরণের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে; ভর্তি পরীক্ষা চলার সময় ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্রীদের রাতে হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে যেন জটিলতার সৃষ্টি না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে; ভর্তি পরীক্ষায় কোনো ধরনের অসাধু উপায়, নকল ও প্রক্সি পরীক্ষার মতো অনৈতিক ঘটনা যেন না ঘটে, সে বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

স্মারকলিপি দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেই ছাত্রলীগ নেতা প্রক্সি–কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তিনিই যখন সাংগঠনিক প্যাডে প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি দেন, তখন সেটি চ্যালেঞ্জিং হয়ে যায় যে, আমি একজন প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী বা জালিয়াতি চক্রের হোতা, আপনাদের স্মারকলিপি দিয়ে আলটিমেটাম দিচ্ছি, আপনারা এই অনিয়ম বা জালিয়াতি থামান।’