Thank you for trying Sticky AMP!!

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এনজিওতে রাখা টাকা ফেরত পেতে মানববন্ধন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে এক এনজিওতে জমা রাখা টাকা ফেরতের দাবিত মানববন্ধন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) জমা রাখা টাকা ফেরতের দাবিতে আজ রোববার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা প্রতারিত পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ ব্যানার প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধনে অংশ নেন।

ওই সব মানুষের অভিযোগ, ৩৫ হাজার গ্রাহকের ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এনজিওটি। গ্রাহকদের বেশির ভাগই গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মধুমতির প্রতারিত গ্রাহকদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলশাদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র সরকার, নাইমুল হক। আরও বক্তব্য দেন রোকেয়া বেগম, পলি বেগম, লতিফা খাতুন প্রমুখ।

বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব নারী কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করে, কৃষিকাজ করে অনেক কষ্টের জমানো টাকা আমরা রেখেছিলাম মধুমতিতে। দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জমানো টাকাও রেখেছেন অনেক নারী। তাঁদের মিষ্টি কথায় ভুলেছিলাম আমরা লাভের আশায়। লাভ তো দূরের কথা, এখন পুঁজিই গায়েব হয়ে গেল। আমাদের প্রশ্ন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আর্থিক লেনদেনের অনুমতি ছাড়াই জেলায় ৪৬টি শাখা খুলে ১২-১৩ বছর ধরে কার্যক্রম চালিয়ে এল কীভাবে? জেলা প্রশাসন কেন তাদের বেআইনিভাবে কাজ করতে দিল? এখন আমরা টাকা উদ্ধারে জেলা প্রশাসকের কঠোর ভূমিকা চাই।’

সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্য নারায়ণপুর গ্রামের স্নাতকপড়ুয়া লতিফা খাতুন বলেন, ‘আমার কোনো ভাই নেই। বাবার উপার্জনের ছয় লাখ টাকা মধুমতি এনজিওতে জমা রেখেছিলাম। কিন্তু বাবা অসুস্থ হওয়ার পরও এখন চিকিৎসা করার জন্য টাকা উত্তোলন করতে পারছি না। বারবার এনজিও অফিসে ঘুরছি। “দিব, দিচ্ছি” বলে দিচ্ছে না।’

সদর উপজেলার কালীনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নাইমুল হক বলেন, মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা জেলাজুড়ে ৪৬টি শাখায় অবৈধ ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাধারণ জনগণকে ১ লাখ টাকা জমা রাখলে মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা লাভ দেওয়া হবে এবং জমাকৃত টাকা চাওয়ামাত্র ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে মধুমতি। এভাবে জেলার ৫ উপজেলায় ৩৫ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে ১০৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে তারা। আজ–কাল করে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা বিভিন্ন কৌশলে সময় পার করে। টাকা না দিতে মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ রানা স্বেচ্ছায় অবৈধ অস্ত্রসহ পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হন। মধুমতির অন্যান্য পরিচালক মাসুদ রানার আত্মীয়স্বজন গা ঢাকা দেন।

দেলশাদ আলী বলেন, ‘অবসরের পর সরকারের কাছ থেকে পাওয়া ৩৬ লাখ ও ২ ছেলের ১০ লাখ মিলিয়ে ৪৬ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম মধুমতিতে। দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য টাকা রেখেছিলাম। মধুমতির মাসুদ রানা বলেছিলেন, “চাওয়ার দুই দিনের মধ্যে টাকা দিয়ে দেব।” কিন্তু দেননি। সব খুইয়ে আমি এখন নিঃস্ব। ভিসার জন্য এজেন্টকে দুই লাখ দিয়েছিলাম। ভিসাও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু মধুমতির টাকা না পাওয়ায় ভিসা কাজে লাগেনি। এজেন্টকে দেওয়া দুই লাখ টাকাও পাইনি।’

মানববন্ধন শেষে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন ভুক্তভোগীরা।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান বলেন, ‘সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে কী করা যায়, তা দেখব।’

এ ব্যাপারে মধুমতি গ্রুপের আত্মগোপনে থাকা বর্তমান চেয়ারম্যান মাহমুদা খাতুনসহ অন্যান্য পরিচালকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।