Thank you for trying Sticky AMP!!

বাহারি সাজে মেলায় অংশ নেন তরুণীরা। রোববার সকালে বগুড়া শহরের এডওয়ার্ড পার্কে

বগুড়ায় সাত দিনব্যাপী চলছে বৈশাখী মেলা, লাঠিখেলা–পালাগানসহ নানা আয়োজন

বগুড়ায় সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। বগুড়া থিয়েটারের আয়োজনে গতকাল রোববার পয়লা বৈশাখে সকাল সোয়া আটটায় বগুড়ার অ্যাডওয়ার্ড পৌর পার্ক ও শহীদ টিটু মিলনায়তন চত্বরে ৪৩তম বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করা হয়। মেলা প্রাঙ্গণে বাদ্যের তালে তালে চলে লাঠিখেলা। তা দেখে মুগ্ধ হন দর্শক।

সাত দিনের বৈশাখী মেলার মঞ্চে বাউলসংগীত, লোকজ নৃত্য, লাঠিখেলা, পালাগান ছাড়াও নানা লোকজ খেলা পরিবেশিত হবে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বগুড়া পৌরসভা, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহযোগিতায় মেলায় লোকজ ঐতিহ্যের নানা স্টল বসেছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে নাগরদোলা, চরকি, ট্রেন, নৌকাসহ নানা আয়োজন।

মেলা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আরশাদ সায়ীদ। দৈনিক করতোয়ার বার্তা সম্পাদক প্রদীপ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ সাহাবুদ্দীন সৈকত, বাউলগোষ্ঠীর সভাপতি সাঈদ সিদ্দিকী ও সমাজসেবী লাখিন আহমেদ বক্তব্য দেন।

মেলার উদ্বোধনী দিনে ছিল লোকজ সংস্কৃতির আবহ। লাল শাড়িতে ঘোমটা দেওয়া রাঙা বউ বঁটিতে বড় কাতলা মাছ কাটছিলেন, তখন শব্দযন্ত্রে গান বাজছিল, ‘বউ মাছ কোটে রে উঠানে বসিয়া।’ এই দৃশ্য সবার নজর কাড়ে। পাশাপাশি ছিল কদমা, খাজা, গজা, মওয়া মুড়কি, বাতাসা, নিমকিসহ বাহারি লোকজ খাদ্যসামগ্রীর সমাহার।

মেলায় ঘুরতে আসা আশিক আদনান বলেন, ৪৩ বছর ধরে বগুড়ার এই বৈশাখী মেলা বসছে। একসময় মেলার আকর্ষণ ছিল পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, সাপের খেলা ও বানরের খেলা। এখন পুতুলনাচ ও বায়োস্কোপ আর চোখে পড়ে না। তবে মোরগ লড়াই ও লাঠিখেলা আয়োজনের মাধ্যমে মেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন আয়োজকেরা।

বগুড়া থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক হাসান বলেন, এবারের বৈশাখী মেলায় নতুন প্রজন্মের কাছে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ ঐতিহ্য তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মঞ্চে সাপের খেলা, লাঠিখেলা, মোরগ লড়াই উপভোগ করা ছাড়াও মেলায় বিলুপ্ত কিছু গ্রামীণ লোকজ ঐতিহ্য প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা যেমনটা সম্ভব হবে, তেমনি বাঙালির কাছে তাঁর নিজস্ব সংস্কৃতি ফিরে আসবে।

গতকাল সকাল সাড়ে আটটায় বগুড়া জেলা প্রশাসন চত্বর থেকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এটি সাতমাথা স্কয়ার ঘুরে শহীদ খোকন শিশুপার্কে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বাঙালি সাজে হাজারো উৎসবপ্রেমী মানুষ ঢাকঢোলের তালে নেচেগেয়ে অংশ নেন। শোভাযাত্রায় অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য মজিবর রহমান, বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান, বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।

নতুন বউ সেজে মেলার মঞ্চে গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাছ কাটেন এক তরুণী। রোববার সকালে বগুড়া শহরের এডওয়ার্ড পার্কে

লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ, গ্রামীণ জীবনের অনুষঙ্গ, পশুপাখি, ফুল, হাতি, ঘোড়া, মাছ, পালকি, ঘোড়ার গাড়ি, মোরগের লড়াই ও প্যাঁচার প্রতীক ও মুখোশ শোভাযাত্রায় বহন করা হয়। রঙিন পাঞ্জাবি, ফতুয়া, লুঙি পরে বিভিন্ন বয়সী মানুষ অংশ নেন। নারী ও কিশোরীদের পরনের ছিল বাহারি রঙের শাড়ি।

বিসিক বগুড়ার উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান বলেন, লোকজ এই মেলায় ৪০টি স্টলে স্থানীয় কারুশিল্পীদের উৎপাদিত পণ্য, কৃষিপণ্য, বাঁশ, বেত, পাট, শোলা, ধাতব, মৃৎ, চামড়া, তন্তুজাত হরেক রকমের কারুপণ্য, বাচ্চাদের খেলনা এবং ঐতিহ্যবাহী নানা খাবারের পসরা বসেছে। নাগরদোলা ও সাম্পান নৌকায় শিশুদের বিনোদনের আয়োজনও আছে।

এদিকে বগুড়া পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলমের সভাপতিত্বে উৎসবের উদ্বোধন করে বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোস্তফা আলম। প্রধান অতিথি ছিলেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান। সভাপতিত্ব করেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। বর্ষবরণের এই উৎসবে অতিথিরা বলেন, পয়লা বৈশাখের এ উৎসব প্রমাণ করে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্প্রীতির দেশ। উৎসবের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলমন্ত্র আগামীর প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।